মধ্যপ্রদেশের দামোহ জেলায় এক দলিত পরিবারের তিন সদস্যকে গুলি করে খুন করার অভিযোগ উঠলো উচ্চবর্ণের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। আরও এক দলিত ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়েছেন। স্থানীয় এক সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। এই ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য তথা দেশের রাজনীতি। বিজেপি সরকারের আমলে দলিতদের নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
মঙ্গলবার সকালে দমোহ জেলার দেহাত থানার দেবরান গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মূল অভিযুক্ত উচ্চবর্ণ সম্প্রদায়ের জগদীশ প্যাটেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যদিও অভিযুক্ত আরও পাঁচজন পলাতক।
দামোহ'র পুলিশ সুপার ডি আর টেনিওয়ার জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার সময় জগদীশ প্যাটেল তার প্রতিবেশী ঘামন্ডি আহিরওয়ারের বাড়িতে দলবল নিয়ে হামলা চালায়। ঘামন্ডি আহিরওয়ার (৬০), তাঁর স্ত্রী রাজপেয়ারি (৫৮) এবং তাঁদের ছেলে মানক আহিরওয়ারের (৩২) ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। তাঁদের আর এক ছেলে মহেশ আহিরওয়ার গুরুতর আহত অবস্থায় দামোহ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জেরায় জগদীশ প্যাটেল খুনের কথা স্বীকার করেছে। সে জানিয়েছে, তার স্ত্রীকে উত্যক্ত করত মানক আহিরওয়ার। শ্লীলতাহানিও করেছে। তাই মানক ও তার পরিবারের সদস্যদের গুলি করে হত্যা করেছে সে।
সংবাদসংস্থা আইএএনএস সূত্র মারফত জানতে পেরেছে, জগদীশ প্যাটেল গ্রামের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তিনি প্রায়শই লোকেদের সাথে মারামারি করতেন। আরও জানা গেছে যে আহিরওয়ার এবং প্যাটেল পরিবারের মধ্যে একটি জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। জমি বিরোধের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এসপি বলেন, "জেলা রাজস্ব কর্মকর্তাদের একটি দল জমি বিরোধের বিষয়টির সত্যতা যাচাই করছে। জমি বিরোধের বিষয়ে আমরা এই মুহূর্তে বেশি কিছু বলতে পারছি না, আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।"
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনে হত্যা, হামলা চালানোর অভিযোগের পাশাপাশি SC/ST অপরাধ দমন আইনের অধীনেও মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
এই ঘটনায় তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। দলিত নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। প্রদেশ কংগ্রেস প্রধান তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার দিন দিন অবনতি হচ্ছে। এই ঘটনার উচ্চ-পর্যায়ের তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তি দিক সরকার। সরকারের উচিত নিহতের পরিবারকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়া এবং অন্যান্য সদস্যদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া।"
বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) সুপ্রিমো মায়াবতী টুইটারে লেখেন, "এই ঘটনা অন্ধকার যুগের কথা মনে করিয়ে দেয়। মধ্যপ্রদেশে বিজেপি সরকারের অধীনে শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরই অবনতি হয়নি, দরিদ্র, দলিত, উপজাতি ও মহিলাদের নিরাপত্তা দিতেও ব্যর্থ সরকার৷"
এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন ভীম আর্মি প্রধান চন্দ্র শেখর আজাদ। নিহতদের পরিবারের সাথে দেখা করতে যাবেন বলে টুইটারে জানিয়েছেন তিনি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন