ফের একবার গরুকে জাতীয় পশু ঘোষণা করার দাবি তুলল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। সারা দেশে গোহত্যা নিষিদ্ধ করার জন্য কেন্দ্রের উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলেও মনে করেছে হাইকোর্ট।
শনিবার এলাহাবাদ হাই কোর্টের লখনউ বেঞ্চ মহম্মদ আব্দুল খালিক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশ গোহত্যা প্রতিরোধ আইন, ১৯৫৫-এর অধীনে ফৌজদারি ধারা বাতিল করার আবেদন খারিজ করে। এই আবেদন খারিজ করার সময় বিচারপতি শামিম আহমেদ বলেন, “আমরা একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশে বাস করি এবং অবশ্যই সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে আমাদের। হিন্দু ধর্ম মতে গরু ঈশ্বর এবং এর থেকে নানারকম প্রাকৃতিক উপকার পাওয়া যায়। তাই একে রক্ষা করা উচিত এবং শ্রদ্ধা করা উচিত। গরুকে সংরক্ষিত জাতীয় পশু হিসেবে ঘোষণা করার জন্য সংসদে আইন আনুক কেন্দ্র সরকার।“
নিজের আবেদনে আবদুল খালিক জানিয়েছিলেন, পুলিশ কোনো প্রমাণ ছাড়াই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে এবং আদালতে চার্জশিট পেশ করেছে। তাই অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তার বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলাটি বাতিল করা হোক।
কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি আহমেদ বলেন, রেকর্ডে থাকা তথ্য থেকে আবেদনকারীর বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এরপর হিন্দু পুরানের উল্লেখ করে বিচারপতি বলেন, “গরুর সাথে বিভিন্ন দেবতার সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ভগবান শিব (যিনি নন্দীর উপর বসে থাকেন, যা আসলে একটি ষাঁড়) ভগবান ইন্দ্র (কামধেনুর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত), ভগবান কৃষ্ণ (যিনি তাঁর যৌবনে একজন রাখাল ছিলেন)।“
তিনি বলেন, "বিশেষজ্ঞদের মত অনুসারে, সমুদ্রমন্থনের সময় দুধের সাগর থেকে আবির্ভূত হয় গরু। সাত ঋষি তার দেখাশোনা করেন। বৈদিক যুগ থেকেই গরুকে পুজা করা হচ্ছে।"
বিচারক আরও বলেন, গরুর চারটি পা চারটি বেদের প্রতীক। গরুর দুধ চারটি '’পুরুষার্থ’ (ধর্ম' বা ন্যায়পরায়ণতা, 'অর্থ' বা বস্তুগত সম্পদ, 'কাম' বা ইচ্ছা এবং 'মোক্ষ' বা মুক্তি)-এর প্রতীক। তার শিং দেবতাদের প্রতীক। তার মুখ সূর্য ও চন্দ্র, এবং তার কাঁধ অগ্নির প্রতীক।
"ইন্দো-ইউরোপীয় জনগণ, যারা BCE দ্বিতীয় সহস্রাব্দে ভারতে প্রবেশ করেছিল, তারা গরুর পুজা করতেন। গবাদি পশুই তাদের প্রধান অর্থনৈতিক সম্পদ ছিল। দুধ উৎপাদনকারী গরু জবাই নিষিদ্ধ ছিল। মহাভারত, মনুস্মৃতি, ঋগ্বেদ – সবেতেই গোহত্যা নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে”, বলেন বিচারপতি।
বিচারক বলেন, "যে গোহত্যা করে বা অন্যকে হত্যা করার অনুমতি দেয়, তার গায়ে যত লোম আছে তত বছর যেন সে নরকে থাকে"।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে আর একটি মামলায় গরুকে জাতীয় পশু ঘোষণার জন্য আইন তৈরির পরামর্শ দিয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। তার আগে ২০১৭ সালে এই দাবি তুলেছিল রাজস্থান হাইকোর্ট।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন