আরও ভয়ানক পরিস্থিতি দিল্লির বাতাস। মঙ্গলবার সকালে দিল্লিতে বাতাসের গুণমানসূচক (একিউআই) পৌঁছেছে ৪৯৮ –এ। যা ‘অতি ভয়ানক’ বলে ধরা হয়। কমেছে দৃশ্যমানতা। দূষণ মোকাবিলায় জারি করা হয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণের চতুর্থ স্তরের (সর্বোচ্চ) পদক্ষেপ (গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান ৪ বা জিআরএপি ৪)। সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী নির্দেশের আগে যা শিথিল হবে না। এই আবহে কংগ্রেস নেতা শশী থারুর প্রশ্ন তুলেছেন, দিল্লিকে ভারতের রাজধানী রাখা উচিত কিনা?
সোমবার থেকেই দূষণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একাধিক কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, মঙ্গলবারও উন্নতি হয়নি পরিস্থিতি। মঙ্গলবার সকালে দিল্লি ও সংলগ্ন আনন্দ বিহার, অশোক বিহার, ধ্যানচাঁদ স্টেডিয়াম, জাহাঙ্গিরপুরী-সহ বেশির ভাগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে একিউআই ৫০০ অতিক্রম করে গিয়েছে। দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চলে একিউআই পর্যবেক্ষণের জন্য মোট ৩৫টি কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে বাতাসের গুণমান সূচক সবচেয়ে কম ছিল দ্বারকায় (৪৮০)। কিন্তু সেটিও ‘অতি ভয়ানক’ পর্যায়ের উপরেই রয়েছে।
এই আবহে দিল্লির দূষণ পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। সোমবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি ছবি পোস্ট করে কংগ্রেস নেতা লেখেন, ‘দিল্লি অফিসিয়ালি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর। বছরের পর বছর ধরে এই পরিস্থিতি তৈরি হলেও, সরকার এটা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি।‘
এখানেই শেষ নয়। শশী থারুর আরও লেখেন, ‘আমি ২০১৫ সাল থেকে দিল্লির দূষণ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিশেষজ্ঞ এবং স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি সংস্থা চালাচ্ছি। কিন্তু গত বছর সেটা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ কিছুই পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। দিল্লি নভেম্বর থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত বসবাসের অযোগ্য এবং বছরের বাকি সময়েও বসবাসের অযোগ্য। এটা কি এরপরও দেশের রাজধানী থাকবে?’
এদিকে দিল্লির দূষণ পরিস্থিতি কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই স্কুলে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলোর ক্লাসও হচ্ছে অনলাইনে। অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। দিল্লির পাশাপাশি, গুরুগ্রাম এবং নয়ডার স্কুলগুলিতেও অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে।
এছাড়া, দৃশ্যমানতা কম থাকার কারণে ব্যাহত হয়েছে দিল্লির ট্রেন পরিষেবা। জানা গেছে, অন্তত ২২টি ট্রেন দেরিতে চলছে এবং ৯টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। আংশিক ব্যাহত হয়েছে বিমান পরিষেবাও। ইন্ডিগো উড়ান সংস্থা সমাজমাধ্যমে জানিয়েছে, দিল্লি, অমৃতসর এবং চণ্ডীগড়ে বিমান দেরিতে চলার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্মাণকাজ পুরোপুরি বন্ধ রাখা হচ্ছে দিল্লিতে।
এই বিধি কার্যকর থাকাকালীন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া অন্য কোনও ট্রাক দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারবে না। যদিও বৈদ্যুতিন গাড়ি, ডিজেল চালিত বিএস ৬, সিএনজি এবং এলএনজি চালিত ভারী গাড়িকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া দিল্লির বাইরের নম্বর প্লেটের কোনও ছোট পণ্যবাহী গাড়িও অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা ছাড়া চলাচল করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রেও ছাড় দেওয়া হয়েছে ডিজেল চালিত বিএস ৬ গাড়ি, সিএনজি এবং বৈদ্যুতিন গাড়ির জন্য।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দিল্লিতে একিউআই ৩০০-এর নীচে নেমে গেলেও আদালতের অনুমতি ছাড়া চতুর্থ স্তরের নিয়ন্ত্রণবিধি শিথিল করা যাবে না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন