দিল্লির দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে সম্পূর্ণ লকডাউনের মত ব্যবস্থা নিতে রাজী দিল্লি সরকার। যদিও এর ফলে বায়ু দূষণের মাত্রায় খুব সামান্যই হেরফের হবে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে একথা জানিয়েছে দিল্লি সরকার। দিল্লির বায়ু দূষণের মাত্রা তীব্র হওয়ায় শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। আদিত্য দুবের করা মামলায় এদিন প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানি হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ছাড়াও বেঞ্চে আছেন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি সূর্য কান্ত।
প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা এদিন কেন্দ্রীয় সরকারকে এই ভয়ংকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জরুরি পরিকল্পনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি এদিন কেন্দ্রীয় সরকার এবং দিল্লি সরকারের কাছে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা জানতে চান। এদিন আদালতে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা জানান, দিল্লি বায়ুদূষণে ফসল কাটার পর মাঠে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার প্রভাব মাত্র ১০ শতাংশ।
এদিন শীর্ষ আদালতে দিল্লির অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সরকারের পক্ষ থেকে হলফনামায় জানানো হয়েছে, বায়ুদূষণ কমাতে লকডাউন করা যেতে পারে। যদিও তার প্রভাব খুবই সীমিত। দিল্লির পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলেও অর্থাৎ ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়ন (এনসিআর)-এও যদি একই ধরণের ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে কোনো লাভ হবেনা। দিল্লি সরকার আরও জানিয়েছে, যদি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও একই ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সেক্ষেত্রে আমরা এই ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাজি।
ইতিমধ্যেই দিল্লি সরকারের পক্ষ থেকে আগামী সাত দিন সমস্ত স্কুলে ফিজিক্যাল ক্লাস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি অফিসকে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করারও আবেদন জানানো হয়েছে। আগামী তিন দিনের জন্য সমস্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মূলত স্টাবল বার্নিং (ফসল কাটার পর মাঠে পড়ে থাকা অবশিষ্টাংশে আগুন ধরিয়ে দেওয়া), যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া, শহর এবং সংলগ্ন অঞ্চলে বিভিন্ন কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া এবং যত্রতত্র আবর্জনায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার কারণে দিল্লির বায়ুদূষণের মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
এদিন আদালতে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া হলফনামা পর্যবেক্ষণ করে বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন, বায়ুদূষণের পেছনে ৭৫ ভাগ দায়ী মূলত তিনটি কারণ। এগুলি হল শিল্প, ধুলো এবং পরিবহণ। প্রধান বিচারপতি জানান, আমরা এর আগের শুনানিতেই জানিয়েছিলাম স্টাবল বার্নিং এক্ষেত্রে খুব একটা বড়ো বিষয় নয়। এখানে বেশি দায়ি শহর সংক্রান্ত বিষয়গুলি। এই সমস্ত বিষয়ে নজর দিলেই বায়ুদূষণের মাত্রা কমতে পারে।
এদিন প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা আরও জানান, আমরা যেরকম আশা করছি সেভাবে কোনো জরুরি পরিকল্পনা এখনও গ্রহণ করা হয়নি। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে কী করতে হবে সেটাই আমরা এখনও ঠিক করে উঠতে পারিনি। নির্মাণ ক্ষেত্র, বিদ্যুৎ ক্ষেত্র, পরিবহণ, ধুলো এবং স্টাবল বার্নিং – সমস্তই এই বায়ুদূষণের সঙ্গে যুক্ত। অবিলম্বে কমিটি তৈরি করা হোক এবং আগামীকাল সন্ধ্যের মধ্যে ঠিক করা হোক কীভাবে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন