ফের মুঘল ইতিহাস মুছে ফেলার অভিযোগ উঠল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। সৌজন্যে, রাজধানীর লুতিয়েন্স দিল্লি এলাকার ঔরঙ্গজেব লেন-এর নাম পরিবর্তন। দিল্লির ঔরঙ্গজেব লেনের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখা হবে ‘ডঃ এপিজে আব্দুল কালাম লেন’।
বুধবার নয়াদিল্লি পুর পরিষদের একটি বৈঠকে এই প্রস্তাবনায় প্রশাসনিক সিলমোহর পড়েছে বলে জানিয়েছেন এনডিএমসি-এর ভাইস চেয়ারম্যান সতীশ উপাধ্যায়। এর আগে ২০১৫ সালে ঔরঙ্গজেব রোডের নাম পরিবর্তন করে আব্দুল কালাম রোড রাখা হয়েছিল। কিন্তু পৃথ্বীরাজ রোড ও আব্দুল কালাম রোডকে সংযুক্তকারী রাস্তাটির নাম ‘ঔরঙ্গজেব লেন’ই রয়ে যায়। এবার লুতিয়েন্স দিল্লি এলাকার সেই ঔরঙ্গজেব লেনের নামও পরিবর্তন করে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির নামে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।
এই প্রসঙ্গে সতীশ উপাধ্যায় জানিয়েছেন, “এনডিএমসি-এর অন্তর্ভুক্ত এলাকার ঔরঙ্গজেব লেন-এর নাম পরিবর্তন করে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি নামে ‘ডঃ এপিজে আব্দুল কালাম লেন’ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল আজকের বৈঠকে। নিউ দিল্লি মিউনিসিপাল অ্যাক্ট, ১৯৯৪-এর ২৩১ নং সেকশনের সাব-সেকশন (১)-এর আওতায় প্রস্তাবটিতে সিলমোহর পড়েছে। মানুষের ভাবাবেগকে সম্মান জানানোর জন্য বিভিন্ন রাস্তা, ইন্সটিটিউশন-সহ সরকারি স্থাপত্যগুলির নাম বদলে আমাদের দেশের বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে রাখা উচিত।”
কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন বোর্ডের সিলেবাস থেকে শুরু করে শহর, সেতু ও রাস্তার নামে বিরাট পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। কিছুদিন আগেই এনসিআরটি-এর পাঠ্যক্রম থেকে মুঘল ইতিহাস বাদ যাওয়ায় ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল। আবার বুধবারই মুম্বইয়ের নির্মাণাধীন ভারসোভা-বান্দ্রা সমুদ্র সেতুর নয়া নামকরণ করা হয়েছে 'বীর সাভারকর সেতু'। প্রথম থেকেই বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে দেশের ইতিহাস মুছে শুধুমাত্র হিন্দুত্ববাদকে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ উঠে এসেছে। এই নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্কের শেষ নেই।
বুধবারও মুঘল সম্রাটের নামাঙ্কিত রাস্তার নাম পাল্টে দেওয়া নিয়ে ব্যাপক চটেছেন বিরোধীরা। ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি এস কিউ আর ইলিয়াস এই নিয়ে জানিয়েছেন, “ওরা দেশের ইতিহাসও পাল্টে দিতে চায়। ওদের কাছে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ও মুঘল সম্রাটদের নামের লম্বা তালিকা আছে যা ওরা মুছে ফেলতে চায়।” শুধু বিরোধী নয়, এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ দেশের ইতিহাসবিদদের একটা বড় অংশও। ঐতিহাসিক মহলের মতে, এই ধরণের নামকরণ শুধু নামকরণ নয়। এইসব নামকরণেরও একটা ইতিহাস থাকে। সেই নাম পাল্টে দেওয়া মানে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সেই ইতিহাসও মুছে দেওয়া।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন