যৌনকর্মীরও না বলার আছে, কিন্তু বিবাহিত মহিলাদের নেই! আইনে নাকি এমনই রয়েছে। বৈবাহিক ধর্ষণ সংক্রান্ত একটি মামলায় এই মন্তব্য করলেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি। যদিও তিনি বৈবাহিক ধর্ষণকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবেই গণ্য করছেন। অন্যদিকে আর এক বিচারপতি বৈবাহিক ধর্ষণকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে মনেই করছেন না। বিচারপতিদের এহেন কাণ্ডে হতবাক মামলাকারীরা। সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে।
বৈবাহিক ধর্ষণকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে কিনা তা নিয়ে বেশকিছুদিন যাবৎ মামলা চলছিল দিল্লি হাইকোর্টে। কিন্তু বুধবার মামলা শেষে দিল্লি আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি এ ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ করায় ধোঁয়াশায় থেকে গেল পুরো বিষয়টি।
এদিন মামলা শেষে বিচারপতি রাজীব সাখধের জানান, "ভারতীয় দণ্ডবিধিতে এটি ব্যতিক্রম। স্ত্রীদের অসম্মতিতে স্বামীরা যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলে বিষয়টি নীতি বিরোধী এবং সংবিধান বিরোধী। সংবিধানে যে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলা আছে তা লঙ্ঘিত হয়।" বৈবাহিক ধর্ষণকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে তিনি বলেন, "জটিল সামাজিক সমস্যাগুলির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া আদালতের দায়িত্ব এবং সেগুলিকে আমরা পাশ কাটিয়ে যেতে পারি না।"
অন্যদিকে বিচারপতি হরিশঙ্কর তাঁর রায়ে বলেন, আমি আমার বন্ধুর সাথে সহমত হতে পারলাম না। ফৌজদারি আইনে বৈবাহিক ধর্ষণকে যেভাবে ব্যতিক্রমী বলে উল্লেখ করা হয়েছে তা কখনোই নারীর সংবিধানিক সমানাধিকার লঙ্ঘন করে না। তাই এই ব্যক্তিক্রমী ধারা বদল নিষ্প্রয়োজন। তা বহাল থাকুক।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারার ২ নং ব্যতিক্রম তুলে ধরে বিচারপতি সাখধের আরও বলেন, "আইনত, যৌনকর্মীরা না বলতে পারেন, তবে বিবাহিত মহিলারা তা পারেন না। যদি কোনও মহিলার স্বামী তাঁর স্ত্রীর গণধর্ষণে যুক্ত থাকেন, তাহলে তিনি সম্পর্কের খাতিরে পার পেয়ে যাবেন। অন্য অভিযুক্ত ধর্ষণের সাজা ভোগ করলেও ধর্ষণকারী স্বামীর কিছুই হবে না। এই জঘন্য সাধারণ আইন এমন মতবাদকে স্বীকৃতি দেয় যে একজন বিবাহিত মহিলা নিজের যৌন অধিকার হারায়। তিনি যেন সম্পত্তি ছাড়া কিছুই নন।"
বিচারপতি সাখধের স্পষ্ট জানান, স্বামীর যৌন নিপীড়নকে ধর্ষণ বলে আখ্যায়িত করা দরকার। তিনি বলেন, "ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণ দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত না হলেও এটিকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের পর্যায়ে ফেলা হয়। শরীরই হোক কিংবা পরিচয়, স্ত্রীর কোনও কিছুর উপরই কর্তৃত্ব ফলাতে পারেন না স্বামী। স্ত্রীর শরীরকে স্বামী যদি নিজের সম্পত্তি ভাবেন এবং তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন, তাহলে সেটা ধর্ষণ ছাড়া আর কিছুই নয়।"
বিচারকদের দ্বিমত প্রকাশে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার ফলে দুই বিচারপতি আবেদনকারীকে উচ্চ আদালতে যাওয়ার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে, এই ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল বলেন, বৈবাহিক ধর্ষণের ঘটনা আমাদের দেশে দিন দিন বাড়ছে। ব্রিটিশ আমল থেকে চলা এই ফৌজদারি আইনে বৈবাহিক ধর্ষণের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন আনার দাবি জানানো হয়েছিল তা মানা হলো না। আর কতদিনে সুরাহা হবে তাও জানা নেই। তবে আশা করা যায় সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে আগামীতে সুবিচার করবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন