গণেশ পুজোর সময় সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আরতিও করেছিলেন তিনি। নিজেই সেই দৃশ্যের ভিডিও সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনা শুরু হয়েছিল। সম্প্রতি সেই বিষয় নিয়ে মুখ খুললেন ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। এটিকে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ঘটনা বলে মন্তব্য করলেন তিনি। পাশাপাশি, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা মানে সব সময় সরকারের বিরুদ্ধে মন্তব্য করা নয়, এহেন মন্তব্য করতেও শোনা যায় প্রধান বিচারপতিকে।
গত ১১ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পদ থেকে অবসর নিয়েছেন ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। চন্দ্রচূড়ের পর ওই পদে বসেছেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। তার আগে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর তাঁর বাড়িতে আসা নিয়ে চন্দ্রচূড় বলেন, ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আমার বাড়িতে এসেছিলেন। আমি মনে করি, এতে কোথাও কোনও ভুল ছিল না।‘
এর আগে এই বিষয়ে চন্দ্রচূড় বলেছিলেন, ‘সরকারের প্রধানদের সঙ্গে বিচারপতিদের বৈঠক মানেই, কোনও ‘বোঝাপড়া’ হচ্ছে, এমনটা নয়।‘ প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টেম্বর চন্দ্রচূড়ের দিল্লির সরকারি বাসভবনে আয়োজিত গণেশ পুজোয় অংশগ্রহণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সমাজমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, প্রদীপের থালা হাতে আরতি করছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বাঁ দিকে রয়েছেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় এবং ডান দিকে তাঁর স্ত্রী কল্পনা দাস।
সাক্ষাৎকারে বিচারবিভাগীয় নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা ব্যাখ্যা করে চন্দ্রচূড় বলেন, নির্বাচনী বন্ডকে যখন অসাংবিধানিক ঘোষণা করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল আদালত, সেই সময় সকলে প্রশংসা করেছিলেন। আমাকে 'স্বাধীন' বলে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে রায় না দিলেই অন্য সুর শোনা যায় সকলের গলায়।
চন্দ্রচূড়ের কথায়, ‘নির্বাচনী বন্ড নিয়ে ওই রায় দেওয়ার অর্থ তুমি স্বাধীন। কিন্তু কোনও রায় যদি সরকারের পক্ষে যায়, তাহলে স্বাধীন নও। আমার কাছে স্বাধীনতার সংজ্ঞা কখনওই এমন নয়।‘ উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ । ২০১৮ সালে কেন্দ্রের চালু করা ওই নির্বাচনী বন্ড আসলে বিজেপি-কে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিতেই আনা হয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল।
পাশাপাশি, এদিন বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতার অর্থ বোঝান তিনি। চন্দ্রচূড় বলেন, ‘বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা বলতে, সরকারি প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা। কিন্তু বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা বলতে শুধুমাত্র তা বোঝায় না। সমাজ পাল্টেছে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে, যাদের স্বার্থ জড়িয়ে আছে, তারা বৈদ্যুতিন মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে চাপসৃষ্টি করে। যাতে আদালতের রায় তাদের পক্ষে যায়। তাদের পক্ষে রায় না গেলেই, আপনি স্বাধীন নন। বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতার অর্থ, নিজের বিবেকের কথা শুনে স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। আইন এবং সংবিধানের পাশাপাশি, অবশ্যই বিবেকের প্রশ্ন জড়িয়ে থাকে।‘
চন্দ্রচূড়ের মতে, সাধারণ মানুষের উচিত বিচারপতিদের উপর সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া। তাঁর কথায়, ‘যে মামলা সরকারের বিপক্ষে যাওয়া উচিত, সরকারের বিরুদ্ধেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। কিন্তু কোনও মামলায় যদি সরকারের পক্ষে রায় দেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেখানে আইন মেনেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বিচারব্যবস্থাকে স্থিতিশীল এবং প্রাণবন্ত রাখতে হলে এই বার্তা সকলের কাছে পৌঁছনো উচিত।‘
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন