নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আইনি পথে যেতে পারে কংগ্রেস। হরিয়ানার নির্বাচন নিয়ে কংগ্রেসের তোলা বেশ কিছু অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া উত্তরে শব্দ প্রয়োগ নিয়ে শুক্রবারই এক কড়া চিঠি দিয়েছে কংগ্রেস। যে চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন কংগ্রেস দলকে এবং কংগ্রেস নেতৃত্বকে যেভাবে হুমকি দিয়েছে তা চলতে থাকলে আইনি পথে যাবার কথা ভাববে কংগ্রেস। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন কে সি বেণুগোপাল, অশোক গেহলট, অজয় মাকেন সহ নয়জন শীর্ষ নেতৃত্ব।
হরিয়ানার নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের পর প্রায় কুড়িটি কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছিল কংগ্রেস। যার উত্তরে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন, “অস্বস্তিকর নির্বাচনী ফলাফলের মুখোমুখি হওয়ার পরে ভিত্তিহীন অভিযোগ” করার জন্য কংগ্রেসের সমালোচনা করে এবং “ভিত্তিহীন এবং চাঞ্চল্যকর অভিযোগ” করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে। নির্বাচনী সংস্থা কংগ্রেসের আনা অভিযোগগুলিকে "দায়িত্বজ্ঞানহীন" বলে জানায়। একই সঙ্গে হরিয়ানার নির্বাচনী প্রক্রিয়া ত্রুটিহীন ছিল বলে জোরের সঙ্গে জানায় এবং "অর্থহীন অভিযোগের প্রবণতা" রোধে কংগ্রেসকে পদক্ষেপ নিতে বলে।
নির্বাচন কমিশনের এই চিঠির উত্তরে শুক্রবার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক চিঠি লেখা হয়েছে। যে চিঠিতে কংগ্রেস জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন যে ভাষায় কংগ্রেসকে উত্তর দিয়েছে তা হালকাভাবে নেওয়া যাচ্ছে না। কমিশনের প্রতিটি উত্তর এখন হয় দলের বিরুদ্ধে অথবা কোনও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণের দিকে যাচ্ছে।
গত ৮ অক্টোবর হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনা হয়। এই গণনায় কংগ্রেস প্রাথমিকভাবে এগিয়ে থাকলেও পরে বিজেপি এগিয়ে যায় এবং রাজ্যের ৯০ টি আসনের মধ্যে ৪৮টিতে জয়লাভ করে। এই নির্বাচনে কংগ্রেস ৩৭টি আসনে জয়ী হয়৷ কংগ্রেসের অভিযোগ, কমিশনে ফলাফলের আপডেট দেবার সময় ‘অস্বাভাবিক দেরি’ হয়েছে। যদিও এই অভিযোগ খারিজ করেছে নির্বাচন কমিশন। পরে কংগ্রেস আরও জানায় যে তারা নির্বাচনের রায়কে “সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত, সম্পূর্ণ বিস্ময়কর এবং প্রত্যাশ্যার সম্পূর্ণ বিপরীত” বলে মেনে নিতে পারছে না।
কংগ্রেস আরও জানায়, “আমরা হরিয়ানায় আজ যা দেখেছি তা কৌশল করে জয়, জনগণের ইচ্ছাকে নস্যাৎ করার জয় এবং স্বচ্ছ, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরাজয়। হরিয়ানার এই অধ্যায় সম্পূর্ণ হয়নি।”
হরিয়ানার ভোটের ফলাফলে ইভিএম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল কংগ্রেস। খুব স্পষ্টভাবে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ২০টি আসন সম্পর্কে জানানো হয়েছিল, গণনার সময় অনেক ইভিএম-এ ৯৯ শতাংশ ব্যাটারি চার্জ ছিল। এছাড়াও গণনার সময় কংগ্রেসের এজেন্টদের প্রাপ্ত ভোট মিলিয়ে দেখার সুযোগ দেওয়া হয়নি। উল্লেখযোগ্যভাবে এই ১৩ আসনের মধ্যেই ১২টিতেই জয়লাভ করে বিজেপি।
যে কুড়িটি আসন নিয়ে কংগ্রেসের অভিযোগ সেগুলি হল নারাউল, কার্নাল, দাবওয়ালি, রেওয়ারি, হোদাল, কালকা, পানিপথ সিটি, ইন্দ্রি, বাদখাল, ফরিদাবাদ এনআইটি, নালওয়া, রানিয়া, পাতাউদি (এসসি), পালওয়াল, বল্লভগড়, বারওয়ালা, উচানা কলান, ঘারাউন্দা, কোসলি এবং বাদশাহপুর।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৫৫,৪৮,৮০০ (৩৯.৯৪%) এবং কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ৫৪,৩০,৬০২ (৩৯.০৯%) এবং জোটসঙ্গী সিপিআইএম-এর প্রাপ্ত ভোট ৩৪,৩৭৩ (০.২৫%)। অর্থাৎ দুই দলের মোট প্রাপ্ত ভোট ৫৪,৬৪,৯৭৫ (৩৯.৩৪%)। দুই প্রধান শক্তির প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান মাত্র ৮৩,৮২৫।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন