সামনেই গুজরাট এবং হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে নতুন করে নির্বাচনী বন্ড বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। এজন্য দিনক্ষণও ঠিক করা হয়েছে। এই কর্মসূচী কার্যকর করার জন্য নতুন করে ‘নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প সংশোধন’ করা হয়েছে।
আগামী ১২ নভেম্বর, হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন। এরপর, ১ ও ৫ ডিসেম্বর- দু’দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে গুজরাটে। দুই রাজ্যের নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলি যাতে তহবিল সংগ্রহ করতে পারে সেজন্য নতুন করে নির্বাচনী বন্ড বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।
জানা যাচ্ছে, আগামী ৯ থেকে ১৫ নভেম্বর সারাদেশে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (SBI) প্রায় ২৯ টি শাখা থেকে এই নির্বাচনী বন্ড কেনা যাবে। এরমধ্যে রয়েছে লখনৌ, সিমলা, দেরাদুন, কলকাতা, গুয়াহাটি, চেন্নাই, পটনা, নয়াদিল্লি, চণ্ডীগড়, শ্রীনগর, গান্ধিনগর, ভোপাল, রায়পুর এবং মুম্বইয়ের SBI শাখা।
সোমবার, নতুন গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে ‘দ্যা ইলেক্টোরাল বন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট স্কিম ২০২২’ (the Electoral Bond (Amendment) Scheme, 2022) প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। যে গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে সাধারণ থেকে বিধানসভা নির্বাচনের বছরে নির্বাচনী বন্ড বিক্রির জন্য অতিরিক্ত ১৫ দিন সময় নির্দিষ্ট করতে পারবে কেন্দ্রীয় সরকার।’
সাধারণ নিয়মে বছরে ৪ বার (জানুয়ারি, এপ্রিল, জুলাই এবং অক্টোবর মাসে) নির্বাচনী বন্ড বিক্রি করতে পারে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। সবক্ষেত্রেই, এই বন্ড বিক্রির সময়সীমা থাকে ১ থেকে ১০ তারিখ।
এবার, গুজরাট এবং হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেই নিয়ম পাল্টে দিয়েছে কেন্দ্র। সংশোধিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে- অতিরিক্ত সময় হিসাবে নভেম্বর মাসের ৯-১৫ তারিখ দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে।
জানা যাচ্ছে নতুন নির্বাচনী বন্ড ইস্যু হওয়ার (কেনার পর) তার বৈধতা থাকবে ১৫ দিন৷ অর্থমন্ত্রকের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বন্ডের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পর কোনও রাজনৈতিক দলকে বন্ড ডিপোজিট করলে, সেই টাকা পাবে না দলটি ৷
এর আগে জানা যায় গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে (১ আগস্ট থেকে ২৯ অক্টবরের মধ্যে) ১০,০০০ টি ১ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড ছাপিয়েছে মোদী সরকার।
নির্বাচনী বন্ড আসলে কী?
সুদ বিহীন এই বন্ড আসলে প্রমিসরি নোট (Promissory Note) বা ডিমান্ড ড্রাফট (Demand Draft)-এর মতো। এই বন্ডগুলি বিভিন্ন মূল্যে পাওয়া যায়, যেমন ১ হাজার, ১০ হাজার, ১ লক্ষ, ১০ লক্ষ এবং ১ কোটি টাকার।
যে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা এই বন্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক (SBI) থেকে কিনে চাঁদা হিসাবে তা রাজনৈতিক দলগুলিকে দিতে পারেন। পরে সেই বন্ডগুলি ভাঙিয়ে নিজেদের অ্যাকাউন্টে জমা করতে পারে রাজনৈতিক দলগুলি। তবে, আশ্চর্যের বিষয়, এই নির্বাচনী বন্ডগুলি (চাঁদা হিসাবে) কারা দিয়েছে, তা প্রকাশ করতে হয় না রাজনৈতিক দলগুলিকে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে (লোকসভা ভোটের আগে) বিজেপির মোট আয় ছিল প্রায় ২,৩৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬১ শতাংশ, অর্থাৎ— প্রায় ১,৪৫০ কোটি টাকাই এসেছে নির্বাচনী বন্ড থেকে।
ওই একই বছরে, কংগ্রেসের মোট আয় ছিল ৫৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৯ শতাংশ, অর্থাৎ— প্রায় ৩৮৩ কোটি টাকা এসেছে নির্বাচনী বন্ড থেকে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন