এলগার পরিষদ মামলায় (Elgar Parishad case) জেলবন্দি সাংবাদিক ও সমাজকর্মী গৌতম নভলাখা (Gautam Navlakha)-কে গৃহবন্দী থাকার অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট (The Supreme Court)। তবে, একইসঙ্গে বেশ কয়েকটি শর্ত আরোপ করেছে শীর্ষ আদালত।
বৃহস্পতিবার, বিচারপতি কে এম জোসেফ (Justices K.M. Joseph) এবং বিচারপতি হৃষিকেশ রায়ের (Justices Hrishikesh Roy) বেঞ্চ জানিয়েছে, 'প্রাথমিকভাবে তাঁর (নভলাখা-র) মেডিকেল রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করার কোন কারণ নেই। আমরা মনে করি যে, তাঁকে এক মাসের জন্য গৃহবন্দী করার অনুমতি দেওয়া উচিত।' বেঞ্চ জানিয়েছে, 'গৃহবন্দী এই আদেশ ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কার্যকর করতে হবে।'
একইসঙ্গে বেঞ্চ জানিয়েছে, একমাস গৃহবন্দী থাকাকালীন ইন্টারনেট, কম্পিউটার বা অন্য কোনও যোগাযোগের যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন না নভলাখা। তবে, ১০ মিনিটের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই মোবাইল ফোন ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর এই মোবাইল পুলিশই সরবরাহ করবে।
আদালত আরও জানিয়েছে, এ সময় কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবেন না তিনি (নভলাখা)। এমনকি, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলা যাবেনা। গৃহবন্দী অবস্থায় সপ্তাহে দুই ঘণ্টা পরিবারের দুই সদস্যের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা থাকছে। যদিও, নভলাখার সঙ্গী সাহবা হুসেন তাঁর সঙ্গে থাকতে পারবেন বলে জানিয়েছে আদালত। শীর্ষ আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছে যে, আবাসনের প্রবেশদ্বার এবং ঘরের বাইরে সিসিটিভি থাকতে হবে।
শুধু তাই নয়, নজরদারির জন্য নভলাখাকেই খরচ বহন করতে হবে। এ জন্য তাকে ২.৪ লক্ষ টাকা জমা দিতে বলেছে শীর্ষ আদালত। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ডিসেম্বরে। যদিও, দিনক্ষণ এখনও জানা যায়নি।
নভলাখাকে আনুমানিক ২.৪ লক্ষ টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কারণ, জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ দাবি করেছিল যে পুলিশ কর্মী সরবরাহ করার জন্য এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের আগস্টে, সত্তর বছর বয়সী সমাজকর্মী গৌতম নভলাখা-কে ইউএপিএ (UAPA) আইনে গ্রেপ্তার করে NIA। প্রথমে তাঁকে গৃহবন্দী রাখা হয়। এরপর তাঁকে নভি মুম্বাইয়ের তালোজা কারাগারে বন্দী রাখা হয়। ২০২১ সালের অক্টোবরে, আন্ধা সেলে (উচ্চ নিরাপত্তা ব্যারাক) স্থানান্তরিত করা হয় নাভালাকে। এখন তিনি আন্ধা সেলের নির্জন কারাগারেই রয়েছেন।
এলগার পরিষদের মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা NIA। তাঁদের বিরুদ্ধে দেশবিরোধী সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু, কয়েক বছর পার হয়ে গেলেও, অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ সহ আদালতে চার্জশিট (হলফনামা) জমা করতে পারেনি NIA। প্রায় সকলেই (১৩ জন) এখন বিনা বিচারে জেলে বন্দী রয়েছেন।
বুধবার, শীর্ষ আদালতে এনআইএ-র পক্ষে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু বলেন, এই মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ, মুম্বাইয়ের যশলোক হাসপাতাল থেকে যে মেডিকেল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে সেই মেডিকেল বোর্ডে চিকিৎসক হিসেবে আছেন নভলাখার শ্যালক।
নভলাখার পক্ষে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিবাল বুধবার জানিয়েছিলেন, মেডিকেল রিপোর্টে দেখা গেছে যে কারাগারে তাঁর চিকিৎসার কোনও সম্ভাবনা নেই।
এস ভি রাজু আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করে জানান নভলাখার স্বাস্থ্যের অবস্থা এতটা খারাপ নয় যে তাঁকে গৃহবন্দী রাখতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট এর আগে এই মামলায় ৮২ বছর বয়সী কর্মী পি ভারাভারা রাওকে জামিন দিয়েছিল।
নভলাখা হাইকোর্টে জানিয়েছিলেন, তালোজা কারাগারে অতিরিক্ত ভিড়, টয়লেটগুলি নোংরা এবং সেখানে কারাবাসের সময় তাঁর চিকিৎসার অবস্থার অবনতি হয়েছিল।
তিনি আরও দাবি করেন যে, জেল সুপার তাঁকে একটি চেয়ার, একজোড়া চপ্পল, তার চশমা এবং একটি পিজি ওয়াডহাউস বই দিতে অস্বীকার করেছিলেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন