আসামে এনআরসির কাজে বেআইনিভাবে প্রচুর সরকারি অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। কোটি কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে৷ সোমবার, এমনই অভিযোগ তুলে এনআরসির প্রাক্তন কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলার বিরদ্ধে নতুন এফআইআর (FIR) দায়ের করেছেন বর্তমান কো-অর্ডিনেটর হিতেশ দেবশর্মা৷
গত মাসে প্রতীক হাজেলার বিরুদ্ধে দেশবিরোধী কাজের অভিযোগ এনে সিআইডি-র কাছে এফআইআর করেছিলেন হিতেশ দেবশর্মা৷ সেই রেশ না কাটতেই, চলতি সপ্তাহে আসাম সরকারের ভিজিল্যান্স এবং দুর্নীতি দমন শাখার কাছে হাজেলার বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ এনেছেন তিনি।
হিতেশ দেবশর্মা শুধুমাত্র এনআরসির রাজ্য কো-অর্ডিনেটর নন, তিনি বর্তমানে আসাম সরকারের স্বরাষ্ট্র ও রাজনৈতিক বিভাগের সচিব। হাজেলার বিরুদ্ধে এফআইআর (FIR)-এ তিনি জানিয়েছেন, 'তৎকালীন এনআরসি কো-অর্ডিনেটর জানতেন, ডেটা এন্ট্রি অপারেটর (DEO) নিয়োগের জন্য সাব-কন্ট্রাক্টর ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও এই M/S ইন্টিগ্রেটেড সিস্টেম পরিষেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অফিসিয়ালি সিস্টেম ইন্টিগ্রেটর (SI)-এর প্রস্তাব অনুমোদন করেননি৷'
অডিট রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে দেবশর্মা এদিন বলেন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের (DEO) পারিতোষিক বরাদ্দ ছিল মাসিক ১৪,৫০০ টাকা থেকে ১৭,৫০০ টাকা৷ কিন্তু চার বছর ধরে তাদের দেওয়া হচ্ছিল প্রতি মাসে ৫,৫০০ টাকা থেকে ৯,১০০ টাকা৷ এনআরসির ঠিকা ভিত্তিক কর্মচারীদের জন্য ১৫৫ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল৷ এর একটা বড় অংশই উধাও হয়ে গেছে৷
এ ছাড়া থার্ড পার্টি মনিটরিং কনসালটেন্টের (TPMC) নামে ১০ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ের উল্লেখ রয়েছে৷ একে অপ্রয়োজনীয় এবং সরকারি অর্থের অপচয় বলেই মামলায় উল্লেখ করেছেন দেবশর্মা৷
তবে শুধু হাজেলা নন, এফআইআর-এ নতুন দু'জনের নাম টেনে এনেছেন দেবশর্মা৷ তাঁরা হলেন প্রলয় শীল এবং রাজেশ জৈন৷ জানানো হয়েছে, প্রলয় শীল কোনও সরকারি কর্মচারী বা ঠিকাদার ছিলেন না৷ কিন্তু এনআরসির সমস্ত কাজে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তাঁকেই দেখা যেত। অবৈধভাবে তিনি সব কিছুতে হস্তক্ষেপ করতেন৷ এছাড়া, রাজেশ জৈন ছিলেন থার্ড পার্টি মনিটরিং কনসালটেন্ট (TPMC)৷ এনআরসির কাজে এই ধরনের কনসালটেন্টের কোনও প্রয়োজনই ছিল না বলে জানিয়েছেন দেবশর্মা৷
অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে আসামের মানুষের তথ্য যাচাইয়ের জন্য এনআরসি আপডেট করার সময় 'বংশলতিকা' বা "Family Tree Matching" পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীকালে এই পদ্ধতি চালু রাখা হলেও, অন্য পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছিল। যে সফটওয়ারের মাধ্যমে এনআরসি নথিভুক্ত হয়েছে, তাতে ইচ্ছাকৃতভাবে মান যাচাইয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
হিতেশ দেবশর্মার দাবি, 'এটি জাতীয় নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই এটিকে দেশবিরোধী কাজ হিসেবে দেখা যেতে পারে।'
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন