রাজ্যের বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলিকে আদানি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল মহারাষ্ট্র সরকার। কিন্তু, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুৎ কর্মী ও ইঞ্জিনিয়াররা। টানা ৭২ ঘন্টার ধর্মঘট চালিয়েছেন তাঁরা। আর, বিদ্যুৎ কর্মীদের তীব্র আন্দোলনের জেরে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে সরকার। উপমুখ্যমন্ত্রী ফড়নবীশ জানিয়েছেন, সরকারি মালিকানাধীন তিনটি বিদ্যুৎ কোম্পানির বেসরকারিকরণ করার কোনও ইচ্ছে নেই সরকারের।
এদিকে, সরকারি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে বাঁচাতে কর্মীদের এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সিআইটিইউ'র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন। তিনি জানান, কর্পোরেটের স্বার্থবাহী সরকারের ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপকে রুখে দিয়ে অসাধারণ বিজয় অর্জন করেছেন মহারাষ্ট্রের বিদ্যুৎ কর্মী ও ইঞ্জিনিয়াররা। আদানি গোষ্ঠীকে সমান্তরাল লাইসেন্স দেবার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা ঘোষণা করতে হয়েছে উপমুখ্যমন্ত্রীকে। এই লড়াইয়ে সরকারকে পিছু হঠতে বাধ্য করার জন্য ধর্মঘটী শ্রমিকদের অভিনন্দন।' একইসঙ্গে তিনি জানান, আগামীতে মহারাষ্ট্র সরকার কী পদক্ষেপ নেয় সে দিকেও সতর্ক নজর রাখা দরকার।'
মহারাষ্ট্রের এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছে বিদ্যুৎ কর্মী ও ইঞ্জিনিয়ারদের জাতীয় কোঅর্ডিনেশন কমিটিও। কমিটির আহ্বায়ক প্রশান্ত নন্দী চৌধুরী বলেন, উত্তর প্রদেশ, জন্মু কাশ্মীর, চন্ডীগড়, পুদুচেরির পরে বিদ্যুৎ ক্ষেত্র বেসরকারিকরনের আরও একটি প্রয়াসকে রুখে দেওয়া সম্ভব হলো।
মহারাষ্ট্র স্টেট ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন কর্পোরেশন লিমিটেড (মহাবিতরণ), মহারাষ্ট্র স্টেট ইলেকট্রিসিটি ট্রান্সমিশন কর্পোরেশন লিমিটেড (মহাপারশান) এবং মহারাষ্ট্র স্টেট ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কর্পোরেশন লিমিটেড (মহানির্মিতি) হল সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থা। এই তিনটি বিদ্যুৎ সংস্থার প্রায় ৮৬ হাজার কর্মচারী, কর্মকর্তা, ইঞ্জিনিয়ার এবং ৪২ হাজার চুক্তি কর্মী এবং নিরাপত্তা কর্মীরা গত বুধবার থেকে ধর্মঘটে নেমেছিলেন। সকলে একজোট হয়ে বেসরকারিকরনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। তাঁদের এই আন্দোলনকে অভিনন্দন জানিয়েছে সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটি।
বৃহস্পতিবার এক প্রেস বিবৃতিতে সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখার্জি এবং সাধারণ সম্পাদক অনাদি সাহু বলেছেন, বিজেপি জোটের মহারাষ্ট্র সরকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বেসরকারিকরণে আগ্রাসী প্রয়াস নিয়েছে। এই অপচেষ্টা প্রতিরোধ করতে তীব্র লড়াই-সংগ্রামে শামিল হয়েছেন ওই রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্মী, ইঞ্জিনিয়ার, বিদ্যুৎ শিল্পের ঠিকা শ্রমিকরা। তাঁরা রাজ্য সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যৌথ আকশন কমিটির ডাকে ধর্মঘটে সামিল হলে প্রথম দিনেই সেখানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। সেই অবস্থায় পিছু হটে সরকার। মহারাষ্ট্রে বিদ্যুৎ কর্মীদের এই জয়কে অভিনন্দন জানিয়ে তাঁদের ভবিষ্যৎ আন্দোলনের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করেছে সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটি।
জানা যাচ্ছে, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে, মুম্বাইয়ের বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য লাইসেন্স চেয়েছিল আদানি গ্রুপের একটি কোম্পানি।
মহারাষ্ট্র বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক কমিশনের কাছে ভান্ডুপ, মুলুন্ড, থানে, নভি মুম্বাই, পানভেল, তালোজা এবং উরান শহরাঞ্চলে মহাবিতরণের এক্তিয়ারের বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য একটি সমান্তরাল লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিল আদানি ইলেকট্রিসিটি নভি মুম্বাই লিমিটেড।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন