কেন্দ্রের বন সংরক্ষণ (সংশোধনী) বিল ২০২৩ নিয়ে এবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা। কনস্টিটিউশনাল কনডাক্ট গ্রুপ (সিসিজি)-এর সদস্য হিসেবে ১০০ জনেরও বেশি প্রাক্তন বেসামরিক সরকারি কর্মচারীরা মিলিতভাবে সংসদের সদস্যদের এই নিয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। সেই চিঠিতে তাঁরা বন সংরক্ষণ বিলের বিষয়বস্তু ও বিল পাশের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সিসিজি-এর পাঠানো ওই চিঠিতে বন সংরক্ষণ বিলকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে না বলে জানানো হয়েছে। চিঠির বক্তব্য অনুযায়ী, বিলটিকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ বিষয়ক একটি সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো উচিত ছিল। যার পরিবর্তে বিলটিকে পাঠানো হয়েছে একটি সিলেক্ট কমিটিতে, যেখানে কমিটির অধিকাংশ সদস্যই শাসকদলের প্রতিনিধি। এক্ষেত্রে বিলটির পরীক্ষা স্বাভাবিকভাবেই পক্ষপাতদুষ্ট ও অসন্তোষজনক হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, যে ১০৫ জনের সই-সহ চিঠি পাঠিয়ে বন সংরক্ষণ (সংশোধনী) বিল ২০২৩ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে তাতে অধিকাংশ সদস্যই কেন্দ্রের একাধিক মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন উচ্চপদস্থ অধিকর্তা।
চিঠিতে ১৯৮০ সালের বন সংরক্ষণ আইন (এফসিএ)-এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, এই আইন প্রধানত বন ধ্বংস করা প্রতিরোধ করতেই প্রণয়ন করা হয়েছিল। সেই কাজে এই আইন কতটা সফল হয়েছে সেটা একটি তথ্য থেকেই পরিস্কার হয়, যেখানে এটি প্রণয়নের পর গত ৪০ বছরে মাত্র ১.৫ মিলিয়ন হেক্টর বনভূমি উজাড় করা হয়েছে। তবে ইদানিংকালে সেই বন ধ্বংসের পরিমাণ অনেক বেড়েছে বলেই জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে। সাম্প্রতিককালে, ২০১৮-১৯ সাল থেকে ২০২২-২৩ সাল পর্যন্ত মাত্র ৪ বছরেই দেশে নানান বন-বহির্ভূত কাজে ব্যবহারের জন্য ৯০ হাজার হেক্টর বন উজাড় করে দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি, বন উজাড়ের পরিমাণ হ্রাস ও দেশের বনাঞ্চলের বিস্তৃতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব রয়েছে কেন্দ্রের বন উপদেষ্টা কমিটি ও আঞ্চলিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কমিটিগুলির উপরেই। কিন্তু তথ্য-প্রমাণের নিরিখে এটা স্পষ্ট যে সেই কাজে চরম ব্যর্থ এই কমিটিগুলি।
বন সংরক্ষণ আইন ১৯৮০ অনুযায়ী, সংরক্ষিত এলাকা ছাড়া ভারতের সীমান্তের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে বিভিন্ন বন-বহির্ভূত কাজ যেমন দেশের প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রকল্প-সহ হাইওয়ে, রেললাইন, চিড়িয়াখানা, সাফারি ও ইকো-ট্যুরিজমের মতো একাধিক কাজে বনাঞ্চল ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু এই আইনের সংশোধিত বিলে দেশের সীমান্তের কাছাকাছি বনাঞ্চলগুলি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় গুরুত্বের স্বার্থে কৌশলগত সীমান্তরেখা প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ওই চিঠিতে। যার সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে সিকিম ও উত্তরাখণ্ডের মতো ঘন সমৃদ্ধ বনানী ও জীব-বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত রাজ্যগুলির পরিবেশ এবং জীব-বৈচিত্র্যের উপর।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন