সপ্তাহ কয়েকের বিরতির পরে সোমবার আবার সংঘর্ষ ছড়াল বিজেপি শাসিত মণিপুরে। রাজধানী ইম্ফলের চেকন অঞ্চলে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনা এবং আধা সামরিক বাহিনীকে তলব করা হয়েছে। জারি করা হয়েছে কার্ফু। বাড়ানো হয়েছে ইন্টারনেটে নিষেধাজ্ঞা।
পুলিশ সূত্রে খবর, চেকন বাজারে মেইতেই এবং কুকি জনগোষ্ঠীর কয়েক জনের বচসা থেকে অশান্তির সূত্রপাত। প্রথমে হাতাহাতি হয় দু’তরফে। তার পরেই লাঠি এবং অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে শুরু হয় সংঘর্ষ। তাতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন। বাজারের একাধিক দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত গত ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)–এর কর্মসূচি ঘিরে হিংসা ছড়িয়েছিল মণিপুরে। আদি বাসিন্দা মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জো–সহ কয়েকটি জনজাতি সম্প্রদায়ের সংঘর্ষের জেরে মারা যান অন্তত ৭০ জন। গুরুতর আহত ৩০০-র অধিক মানুষ। গোষ্ঠী হিংসার জেরে ঘরছাড়া হন ২৫ হাজারের বেশি মানুষ।
মণিপুরে হাই কোর্টের এক নির্দেশকে সামনে রেখে শুরু হয়েছিল এই বিক্ষোভ। জানা যাচ্ছে, নিজেদের তফশিলি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে 'মেইতেই সম্প্রদায়' (Meitei/Meetei)।
আবার, 'মেইতে সম্প্রদায়'-এর দাবির বিরোধিতা করে আসছে কুকি-সহ অধিকাংশ আদিবাসী সংগঠন। তাদের বক্তব্য, মেইতেরাও যদি তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি পেয়ে যায়, তাহলে আদিবাসীদের অধিকার ক্ষুন্ন হবে। এ নিয়ে এতদিন চাপা উত্তেজনা ছিল।
এরপরেও, মেইতেইদের দাবিকে বিবেচনা করার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয় মণিপুর হাইকোর্ট। তারপরেই নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়।
তাছাড়া, মণিপুরের স্থানীয় বনাঞ্চলগুলিতে সমীক্ষা চালাচ্ছে বিজেপি সরকার। তা নিয়ে আদিবাসীদের আশঙ্কা, বনভূমি ধ্বংস করতে চলেছে সরকার।
তার চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণ, গত কয়েক মাসে সেরাজ্যে অন্তত তিনটি গির্জা ভেঙেছে প্রশাসন। সরকারের দাবি, ওই গির্জাগুলি ছিল বেআইনি। সরকারের এই পদক্ষেপে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে আদিবাসী খ্রিস্টানরা। সেটাও এই বিক্ষোভের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন