চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে রাঁচি-ভিত্তিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (HEC)। পরিস্থিতি এমনই যে, ইসরো (ISRO), প্রতিরক্ষা মন্ত্রক (Ministry of Defence), রেলপথ, কোল ইন্ডিয়া (Coal India) এবং ইস্পাত সেক্টরের কাছ থেকে ১,৫০০ কোটি টাকার বেশি কাজের বরাত পেলেও, তা কার্যকর করতে পারছে না সংস্থাটি। তহবিল সংকটের কারণে সংস্থার ৮০ শতাংশ কাজ ঝুলে রয়েছে।
জানা যাচ্ছে, প্রায় একবছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না HEC-র কর্মকর্তারা। সংস্থার কর্মচারীদেরও ৮-৯ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। সংস্থা চালাতে বেশ কয়েকবার কেন্দ্রের ভারী শিল্প মন্ত্রককের কাছ থেকে ১,০০০ কোটি টাকার মূলধন (working capital) চেয়েও নিরাশ হয়েছে HEC। মন্ত্রক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, HEC-কে কোনওভাবেই সাহায্য করতে পারে না কেন্দ্রীয় সরকার। সংস্থার ম্যানেজমেন্টকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
১৯৬৩ সালে প্রায় ২২,০০০ কর্মী নিয়ে শুরু হয় সংস্থাটি (HEC)। বর্তমানে এই সংস্থায় মাত্র ৩,৪০০ জন কর্মচারী-কর্মকর্তা রয়েছে। তারপরেও, ঋণের দায়ে জর্জরিত হয়ে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতন পরিশোধ করতে পারছে না HEC। ১২ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করছেন HEC-র অফিসাররা। গত পাঁচ দিন ধরে তাঁরা কোম্পানির গেটের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে, বেতনের দাবিতে টানা ধর্মঘট করেন এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মচারীরা। এক মাসের বেতন দিয়ে ধর্মঘট তুলে দেওয়া হলেও, পরে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গিয়েছে।
HEC-র সংকট নিরসনে সরকারের উদাসীনতা বারে বারে প্রকাশ পেয়েছে। এরই মধ্যে, গত দুই বছর ধরে এই সংস্থায় স্থায়ী CMD (Chief Managing Director) নিয়োগ করেনি মোদী সরকার।
উল্টে, এই সংস্থা পরিচালনার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড (BHEL)-র CMD নলিন সিংগালকে। কিন্তু, আজ পর্যন্ত তিনি কখনও HEC পরিদর্শনে আসেননি বলে অভিযোগ।
আন্দোলনকারী কর্মকর্তা ও কর্মীদের অনুরোধে নয়াদিল্লি যাচ্ছেন HEC-র দুই ডিরেক্টর রানা এস চক্রবর্তী ও এম কে সাক্সেনা। বেতন-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কেন্দ্রীয় শিল্প মন্ত্রকের সচিবের সঙ্গে তাঁরা কথা বলবেন।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সংস্থার (HEC-র) সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল মেশিনের আপগ্রেডেশন এবং মূলধন। গত পাঁচ বছর ধরে, ধারাবাহিকভাবে সংস্থার উৎপাদন কমছে। মাত্র ২৫ শতাংশ মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। কয়লাসহ কাঁচামালেরও ঘাটতি রয়েছে।
২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে ইসরোর স্যাটেলাইটের জন্য লঞ্চিং প্যাড সরবরাহ করতে হবে HEC-কে। কিন্তু, এজন্য HEC-র কাছে প্রয়োজনীয় ইস্পাত নেই বলে জানা যাচ্ছে।
এই ধরণের কাজের জন্য HEC-কে প্রয়োজনীয় বিশেষ ইস্পাত সরবরাহ করে থাকে SAIL। কিন্তু, HEC-র কাছে ৫ কোটি টাকা বকেয়া থাকায়, নতুন করে ইস্পাত সরবরাহ করতে অস্বীকার করেছে SAIL।
এই পরিস্থিতিতে, আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, HEC যদি বিশেষ ইস্পাত না পায়, তাহলে ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে ISRO-কে লঞ্চিং প্যাড সরবরাহ করতে পারবে না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন