বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হয়েছে গ্যাংস্টার-রাজনীতিবিদ মুখতার আনসারির। জানা গেছে, বান্দা জেলা হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। যদিও মুখতারের পরিবারের তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে, বিষ প্রয়োগের ফলে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মুখতারের মৃত্যুতে গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে কড়া নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে।
মুখতারের ছেলে উমর দাবি করেন, “আমার বাবাকে ধীরে ধীরে বিষ দেওয়া হচ্ছিল।“ এরপরেই তিনি এই মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়ে আদালতে দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানান।
উমরের দাবি, তাঁর বাবার মৃত্যুর খবর তিনি সংবাদ মাধ্যম থেকে পেয়েছেন। তিনি জানান, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু বলা হয়নি। আমি সংবাদমাধ্যম থেকে বিষয়টি জানতে পারি।“ এর পরই উমর বলেন, “দিন দুয়েক আগেও আমি তাঁর (মুখতার আনসারি) সঙ্গে দেখা করতে জেলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে জেলে পাঠানো হয়েছে। পেট ফুলে গেলে হার্ট অ্যাটাক কিভাবে হতে পারে?”
এরপরেই বিষ প্রয়োগের অভিযোগ তুলে উমর জানান, “ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আপনি দেখতে পাচ্ছেন তাঁর পেট ফুলে গিয়েছিল। তাঁর অবস্থা গুরুতর ছিল। তাঁকে আইসিইউতে ভর্তি করার জন্য আনা হয়েছিল। কিন্তু ১৪ ঘন্টা পরে তাঁকে আবার জেলে পাঠানো হয়েছিল।"
এই ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানান উমর আনসারি। এর আগেও মুখতারকে ‘স্লো পয়জন’ দেওয়া হচ্ছে জেলে, এই অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল তার পরিবার। যদিও সেই সময় জেল কর্তৃপক্ষের থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।
অন্যদিকে, মুখতারের মৃত্যুতে একই সুর শোনা গেল গাজিয়াবাদের সাংসদ তথা তার ছোটো ভাই আফজার আনসারির গলায়। আফজার দাবি তোলেন, তার দাদাকে বিষ প্রয়োগ করে মেরে ফেলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার পেটে যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মুখতার আনসারি। সেই সময় তাকে সাময়িক সুস্থ করে ফের জেলে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার ইফতার করার পর ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে মুখতারের। রাতেই মৃত্যু ঘটে তার। জানা গেছে, শুক্রবার ময়নাতদন্তের পর তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে মুখতারের মৃতদেহ। তারপরেই শেষকৃত্য হবে তার।
অন্যদিকে, মুখতারের মৃত্যুতে গোটা উত্তরপ্রদেশ কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেই জরুরী বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এদিকে গাজিয়াবাদ এবং বান্দায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রাত থেকেই এলাকায় এলাকায় রুট মার্চ শুরু করে পুলিশ। এদিকে মুখতার আনসারি মৃত্যুর ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের বান্দা, মউ, গাজিপুর এবং বারাণসী জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে পুলিশ প্রশাসন।
উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশের মউ কেন্দ্রের পাঁচ বারের বিধায়ক মুখতার আনসারি। ২০০৫ সালে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। তাঁর বিরুদ্ধে ৬০ টি ফৌজিদারি মামলা বিচারাধীন ছিল। ২০২২ সালে সেপ্টেম্বর থেকে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন আদালতে আটটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বান্দা জেলে বন্দি ছিলেন তিনি। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশ পুলিশের প্রকাশ করা গ্যাংস্টারের তালিকায় ছিলেন মুখতার। কয়েকদিন আগে একটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা পেয়েছিলেন মুখতার।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন