রাজস্থানের কোটায় বাড়তে থাকা পড়ুয়া আত্মহত্যা নিয়ে এবার নড়েচড়ে বসল রাজ্য সরকার। ছাত্র-ছাত্রীদের উপর থেকে মানসিক চাপ কমাতে কোটার সমস্ত কোচিং সেন্টারর জন্য সরকারের তরফে জারি করা হল বিশেষ বিজ্ঞপ্তি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সেই বিজ্ঞপ্তিতে একগুচ্ছ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরে কোটায় এখনও পর্যন্ত ২৬ জন পড়ুয়া মানসিক চাপ ও ডিপ্রেশনের ভুক্তভোগী হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। গত বছর যেখানে আত্মহত্যার ১৫টি ঘটনা উঠে এসেছিল, সেখানে দেশের ‘কোচিং হাব’-এ চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসেই সেই সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবছর সারা দেশ থেকে কয়েকলক্ষ ছাত্র-ছাত্রী ইঞ্জিনয়ারিং ও মেডিক্যাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আসে রাজস্থানের কোটায়। এইভাবে মরুরাজ্যের এই শহর কার্যত পরিণত হয়েছে কোচিং হাবে। কিন্তু প্রতিবছরই পড়াশোনার চাপ সইতে না পেরে আত্মঘাতী হয় পড়ুয়াদের একাংশ। বাড়তে থাকা এই আত্মহননের ঘটনা নিয়ে গত আগস্ট মাসেই পদক্ষেপ নিয়েছে রাজস্থানের অশোক গেহলটের সরকার। গত ১৮ আগস্ট কোটার সমস্ত কোচিং সেন্টারগুলির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর ২৪ আগস্ট এই বিষয়ে গঠিত হয় একটি বিশেষ কমিটি যা ১৯ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের রিপোর্ট জমা দেয়।
কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পরেই পড়ুয়াদের আত্মহত্যা ঠেকাতে কোচিং সেন্টারগুলির জন্য একগুচ্ছ নিয়মবিধি জারি করেছে মরুরাজ্যের সরকার। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কোচিং সেন্টারগুলি নবম শ্রেণির নিচের পড়ুয়াদের ভর্তির ব্যাপারে জোর করতে পারবে না। পাশাপাশি, যদি কোনও নবম শ্রেণির নিচের পড়ুয়া প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পরে ছেড়ে দিতে চায়, তবে ভর্তির সমস্ত টাকা ফেরত দিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে হবে। এছাড়াও, বিশেষ অ্যাডমিশন পরীক্ষায় পড়ুয়াদের মূল্যায়ন ক্ষমতা যাচাই করে তবেই তাঁদের ভর্তি নিতে হবে। কিন্তু সেই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ্যে না আনার জন্য প্রতিটি কোচিং সেন্টারকে সতর্ক করা হয়েছে। মোট কথা, কোচিং সেন্টারগুলি কোনো মতেই নম্বরের ভিত্তিতে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারবে না। মেধাবী ছাত্রদের নিয়েও বেশি মাতামাতি করা যাবে না।
কোটায় আসা পড়ুয়াদের মধ্যে গত কয়েকবছরে পড়াশোনা নিয়ে পাহাড়প্রমাণ চাপ ও ব্যর্থতার ভয় থেকে তৈরি হওয়া ডিপ্রেশনের ঘটনা সামনে এসেছে। আর সেই ডিপ্রেশন থেকেই বেড়েছে আত্মহত্যার প্রবণতাও। এর আগে পড়ুয়াদের মধ্যে কিছুদিনের জন্য চাপ কমাতে জেলা প্রশাসনের তরফে কোটার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে আগামী দুমাস কোনোরকম পরীক্ষা না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। পরীক্ষা নিলেও সেই নম্বর যেন সবার সামনে প্রকাশ না করা হয়, সে বিষয়েও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন