বর্ষীয়ান দলীয় নেতা গুলাম নবী আজাদের পদত্যাগকে দুর্ভাগ্যজনক বলে জানালো কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। শুক্রবার দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রেখে কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ একথা জানিয়েছেন। রমেশ আরও বলেন, সংবাদমাধ্যমে আজাদের চিঠি প্রকাশিত হয়েছে তা তিনি পড়েছেন।
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জয়রাম রমেশ বলেন, "এটি সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক যে, এমন সময়ে এই ঘটনা ঘটেছে যখন কংগ্রেস সভানেত্রী শ্রীমতি সোনিয়া গান্ধী, শ্রী রাহুল গান্ধী এবং সমগ্র পার্টি সংগঠন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারি এবং মেরুকরণের রাজনীতি সহ জনসাধারণের একাধিক ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে এবং চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে ‘মেহঙ্গাই পর হল্লা বোল’ সমাবেশ এবং ৭ই সেপ্টেম্বর কন্যাকুমারী থেকে ভারত জোড়ো পদযাত্রা শুরু করার জন্য দল এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
যদিও দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করার পরেই গুলাম নবি আজাদকে এক ট্যুইট বার্তায় তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন জয়রাম রমেশ। নিজের ট্যুইটে স্পষ্ট ভাষায় তিনি লেখেন, "একজন মানুষ, যাকে কংগ্রেস নেতৃত্বের পক্ষ থেকে সর্বাধিক সম্মান দেওয়া হয়েছিল তিনি তাঁর অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছেন। যা তাঁর আসল চরিত্র উন্মোচিত করেছে। গুলাম নবি আজাদের ডিএনএ এখন বদলে গেছে (মোদী-ফায়েড)।"
আজাদ এর আগে জম্মু ও কাশ্মীর কংগ্রেস প্রচার কমিটির প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এর পরেই তাঁর কিছু অনুগত কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন।
পদত্যাগপত্রে আজাদ অভিযোগ করেন, ২০২০ সালে জি-২৩ নেতারা সোনিয়া গান্ধীকে একটি চিঠি লেখার পরে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের কাছে তাঁকে অপমানিত হতে হয়েছিল।
"দলের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগের জন্য যে ২৩ জন সিনিয়র নেতা চিঠিটি লিখেছিলেন তাদের একমাত্র অপরাধ হ'ল তারা দলের দুর্বলতার কারণ এবং এর প্রতিকার উভয়ই নির্দেশ করেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত গঠনমূলক এবং সহযোগিতামূলক পদ্ধতিতে সেই মতামতগুলিকে বোর্ডে নেওয়ার পরিবর্তে সিডব্লিউসির বিশেষভাবে তলব করা সভায় অপমানিত করা হয়।"
১৯৭০ এর দশকের মাঝামাঝি কংগ্রেসে যোগদান করেন গুলাম নবি আজাদ এবং দল ও সরকার উভয় ক্ষেত্রেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হন। তিনি ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, পিভি নরসিমা রাও এবং ডঃ মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৮০ সাল থেকে আজাদ দলের প্রত্যেক সভাপতির অধীনে AICC-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
দলের সভাপতি সোনিয়া গান্ধীকে উদ্দেশ্য করে তাঁর পদত্যাগপত্রে আজাদ বলেন, "আপনি জানেন যে আপনার প্রয়াত স্বামী সহ প্রয়াত শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, প্রয়াত শ্রী সঞ্জয় গান্ধী থেকে আপনার পরিবারের সাথে আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
"সেই চেতনা থেকে আপনার ব্যক্তিগত ক্লেশের জন্যও আমি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত সম্মান করি এবং যা সর্বদা অব্যাহত থাকবে।
"আমার অন্যান্য সহকর্মীরা এবং আমি এখন সেই আদর্শকে চিরস্থায়ী করার জন্য চেষ্টা করব, যার জন্য আমরা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে আমাদের পুরো জীবনকে উৎসর্গ করেছি"।
জম্মু অঞ্চলে তাঁর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কংগ্রেসের সাথে আজাদের বিচ্ছেদকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি ডোডা জেলার বাসিন্দা।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রবীণ কংগ্রেস নেতা, গুলাম নবী আজাদ শুক্রবার কংগ্রেস দলের প্রাথমিক সদস্যপদ সহ সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। দলের হাইকমান্ডের সাথে তাঁর মতপার্থক্যের কারণে এই ইস্তফা প্রত্যাশিত ছিল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন