সমাজকর্মী তিস্তা শীতলবাদ ও প্রাক্তন ডিজিপি আরবি শ্রীকুমারের জামিনের আবেদন খারিজ করেছে গুজরাটের দায়রা আদালত। শনিবার, এই জামিন খারিজ করেছেন আহমেদাবাদের দায়রা আদালতের অতিরিক্ত প্রধান বিচারপতি ডি ডি ঠক্কর (D D Thakkar)।
বর্তমানে সবরমতি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন শীতলবাদ। ২০০২ সালের গোধরা-পরবর্তী হিংসায় সাক্ষ্য প্রমাণে জালিয়াতির অভিযোগে এক FIR-এর ভিত্তিতে ২৫ জুন সমাজকর্মী তিস্তা শীতলবাদকে গ্রেপ্তার করে গুজরাট পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড (ATS)।
তাঁদের জামিনের আবেদন খারিজ করে বিচারপতি ডি ডি ঠক্কর জানিয়েছেন, 'জামিনের বিবেচনামূলক ক্ষমতা ব্যবহার করার আগে, আদালতকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলি বিবেচনা করতে হবে।' এরপরেই, একধাপ এগিয়ে বিচারপতি জানান, 'অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া হলে, এটি অন্যায়কারীদের উত্সাহিত করবে।'
আদেশে আদালত জানিয়েছে, গুজরাটের 'তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও' জামিন দিয়েছিল আদালত। কিন্তু, 'তথ্য এবং পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে এখনই আবেদনকারী মহিলা (শীতলবাদ) ও অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার (শ্রীকুমার)-এর জামিন (sic) বাড়ানোর প্রয়োজন নেই।'
উল্লেখ্য, তিস্তার বিরুদ্ধে যে হলফনামা পেশ করা হয়েছিল তাতে দাবি করা হয়েছে, ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার পর রাজ্যের বিজেপি সরকারকে ফেলতে প্রয়াত কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেল ৩০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন ধৃত সমাজকর্মীকে। শুধু টাকাই নয়, আরও নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সেই সময় গুজরাটের বিজেপি সরকারকে আসনচ্যুত করতে যে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ করেছিল বিরোধীরা, তারই একটা অংশ ছিলেন তিস্তা, এমনই অভিযোগ করেছে বিজেপি।
তবে, বিজেপি ও গুজরাট পুলিশের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিস্তা শীতলবাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে প্রাক্তন আমলারা। খোলা চিঠি লিখেছেন তাঁরা। তিস্তা শীতলবাদ সম্পর্কিত এক মামলায় রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতি তাঁর সম্পর্কে যে 'ভিত্তিহীন পর্যবেক্ষণ' করেছেন, তা প্রত্যাহার করারও দাবি তুলেছেন প্রাক্তন আমলারা।
গত ২৭ জুলাই, এক বিবৃতিতে তাঁরা জানিয়েছেন, 'সুপ্রিম কোর্টের রায়ে (গুজরাট গণহত্যা সংক্রান্ত) পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে তিস্তা এবং শ্রীকুমারের গ্রেপ্তারীর তীব্র নিন্দা জানাই আমরা। গুজরাটে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার ক্ষেত্রে তিস্তা শীতলবাদের প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। দেশ তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত করেছে। আর বি শ্রীকুমার সরকারী গোপনীয়তা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছিলেন। এমন তথ্যের উপর আলোকপাত করেছিলেন, যা নিশ্চিত ভাবে অপরাধীদের আইনের সামনে আনত।'
এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন- চলচ্চিত্র নির্মাতা অদুর গোপালকৃষ্ণন, কেরালা সাহিত্য আকাদেমির সভাপতি কে সচ্চিদানন্দন, লেখক এম মুকুন্দন, এন এস মাধবন, সারাহ জোসেফ, বৈশাখান, কুরিপুজা শ্রীকুমার প্রমুখ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন