প্রকাশ্য দিবালোকে কয়েকজন মুসলিম ব্যক্তিকে খুঁটিতে বেঁধে মারের অভিযোগে চার পুলিশকর্মীকে সাজা শোনাল গুজরাত হাইকোর্ট। একটি গরবা অনুষ্ঠানে পাথর ছোঁড়ার সন্দেহে কয়েকজন মুসলিম ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। তারপর একেবারে ভরা বাজারে তাঁদের খুঁটিতে বেঁধে ব্যাপক মারধর করেছিলেন ওই চার পুলিশকর্মী। বৃহস্পতিবার সেই অপরাধে গুজরাত হাইকোর্ট তাঁদের ১৪ দিনের কারাদণ্ডের সাজা দিল। যদিও এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার জন্য রায়ের উপর ৯০ দিনের স্থগিতাদেশও মঞ্জুর করেছে আদালত।
গত ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর গুজরাতের খেড়া জেলার উন্ধেলা গ্রামে কয়েকজন মুসলিম ব্যক্তিকে একটি গরবা অনুষ্ঠানে পাথর ছোঁড়ার সন্দেহে আটক করে স্থানীয় পুলিশ। তারপর তাঁদের প্রকাশ্যে দাঁড় করিয়ে খুঁটিতে বেঁধে অসংখ্য পথচলতি মানুষের সামনেই বেধড়ক মারধর করেন। সেই ঘটনায় অভিযুক্ত চার পুলিশকর্মীকে অবশেষে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। এদিন অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের নিঃস্বার্থ ক্ষমা প্রার্থনা প্রত্যাখান করে দিয়ে গুজরাত হাইকোর্টের বিচারপতি এ এস সুপেহিয়ার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়েছে - “এইধরণের অপরাধে কোনও ছাড় দেওয়া মানে অপরাধকে আরও প্রশ্রয় দেওয়া।”
বেঞ্চ আরও জানিয়েছে, “অভিযোগকারী মুসলিম ব্যক্তিদের উপর পুলিশকর্মীদের এই অত্যাচার গোটা মনুষ্যত্বের উপর অত্যাচার। অভিযোগকারীদের একেবারে জনসমক্ষে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর করেছে অভিযুক্ত পুলিশকর্মীরা। বিপুল সংখ্যক মানুষ সেই ঘটনা দাঁড়িয়ে দেখেছে। ঘটনাটি এখন কেবল আর উন্ধেলা গ্রামে সীমাবদ্ধ নেই, তার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে।” বিচারপতি সুপেহিয়া তার পর্যবেক্ষণে আরও জানিয়েছেন, “যেকোনো ধরণের নির্যাতন বা নিষ্ঠুরতা, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ সংবিধানের ২১ নং অনুচ্ছেদের আওতায় পড়ে।”
চার পুলিশকর্মীর অপরাধ নিয়ে বেঞ্চের আরও পর্যবেক্ষণ, “সরকারের কর্মচারীরাই যদি আইন ভাঙতে শুরু করেন, তাহলে তো আইন অবমাননার জন্ম হবেই। পাশাপাশি, অনাচারকেও প্রশ্রয় দেওয়া হবে। এর ফলে প্রত্যেক মানুষই নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করবেন। যার থেকে দেশে নৈরাজ্যের পরিস্থিতি তৈরি হবে। এই মুহূর্তে কোনও সভ্য দেশই সেটা চাইবে না।” অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের এই ঘটনার প্রধান দোষী প্রমাণ করে গুজরাত আদালত ১৪ দিনের কারাবাসের শাস্তি দিয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন