গুজরাটে সাম্প্রতিক বিষমদ কান্ডে প্রায় ৪৬ জনের মৃত্যু হবার পর চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল। জানা যাচ্ছে, এই বছরের মার্চ মাসে রাজ্যের বিজেপি সরকার গুজরাট বিধানসভাকে জানায় ২০২০ এবং ২০২১ সালে, রাজ্য প্রশাসন ২১৫ কোটি টাকার মদ, ৪ কোটি টাকার দেশি মদ এবং ১৬ কোটি টাকার বিয়ার বাজেয়াপ্ত করে। রাজ্যে মদ পাচার, দেশীয় মদ তৈরি বা বেআইনি মদের ব্যবসা করার অভিযোগে প্রায় ৪,০৪৬ জন এখনও পলাতক। উল্লেখ্য, গুজরাটে মদ নিষিদ্ধ।
সম্প্রতি গুজরাটের বোটাদ এবং আহমেদাবাদ জেলায় অবৈধ মদ পান করে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্য সরকারকে মদ নিষিদ্ধ বিধি কঠোর প্রয়োগ বা নিষেধাজ্ঞার প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, সরকারের দেওয়া এই পুরোনো তথ্য সামনে এসেছে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হর্ষ সাঙ্ঘভি জানিয়েছেন, "আমরা একটি রাজ্য মনিটরিং সেল গঠন করেছি, যারা আইএমএফএল এবং দেশী মদের চোরাচালানের উপর নজর রাখে এবং রাজ্য জুড়ে অভিযান চালায়। এই সংস্থা সচেতনতা প্রচারও চালাচ্ছে।"
সরকারী বাজেটের কাগজপত্র অনুসারে, রাজ্য মদ নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে বার্ষিক ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করছে। এই বিষয়ে উত্তর গুজরাটের সমাজকর্মী হাসমুখ প্যাটেল জানিয়েছেন, এই অর্থ বিজ্ঞাপন এবং প্রশাসনিক ব্যয়ের জন্য বেশি খরচ করা হয়েছে এবং মদের আসক্তি থেকে মুক্তি দেবার কাউন্সেলিং বা আসক্তি মুক্ত কেন্দ্র বা পথ নাটকের জন্য কম খরচ করা হয়েছে।
প্যাটেল বলেন, "কয়েক দশক ধরে আমি রাস্তায়, গ্রামে "নশাবন্ধী মন্ডল" বা "নশাবন্ধী সংস্কার কেন্দ্রের" অনুষ্ঠান দেখিনি। তাই এই কেন্দ্রগুলি বা এনজিওগুলি নিষেধাজ্ঞার প্রচার করছে এই তথ্য আমাকে বিভ্রান্ত করেছে।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ শঙ্কর সিংহ বাঘেলা বলেন, "নিষেধাজ্ঞা নীতি রাজ্যে ভেঙে পড়েছে এবং আমি এই নীতি পর্যালোচনার দাবি করছি"। তিনি নীতিটি শিথিল করার এবং স্থানীয় ডিস্টিলারির অনুমতি দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পক্ষে। এই ডিস্টিলারির লাইসেন্স দেওয়া উচিত ঠাকুর কলি এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের যুবকদের, যারা প্রজন্ম ধরে মদ তৈরি করে আসছেন।
বাঘেলা আরও বলেন, বিজেপির কোনো জেলা সভাপতি যখন কোনও প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে মদ্য পান করে ক্যামেরায় ধরা পড়েন অথবা বিজেপি নেতাদের পরিবারের সদস্যরা হয় মদ পান করছেন বা মদের ঘাঁটি চালাচ্ছেন বা বেআইনি ব্যবসা করছেন, তখন এটাই কি প্রমাণ হয়না যে সরকারই মদ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি যথেষ্ট গুরত্ব সহকারে দেখে না।
প্রবীণ অপরাধ বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত দয়াল সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, "রাজ্য সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও আবগারি বিভাগের বার্ষিক রাজস্ব ১৫০ কোটি টাকা, কিন্তু রাজ্যে অবৈধ মদের বাজার ২৫ হাজার কোটি টাকা বলে অনুমান করা হয়।"
প্রাক্তন আইপিএস অফিসার অর্জুন সিং চৌহান জানিয়েছেন, "রাজ্যে নিষেধাজ্ঞার নীতিটি কেবল কাগজে-কলমে আছে। পুলিশ অফিসার এবং রাজনীতিবিদদের সাথে যোগসাজশে বেআইনি ব্যবসায়ীরা বেশ দামে মদ সরবরাহ করছে। রাজ্যজুড়ে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা অসম্ভব, কারণ গুজরাট একটি দ্বীপের মত, যা মদ নিষিদ্ধ নয় এমন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দ্বারা বেষ্টিত। এক সপ্তাহ বা সর্বাধিক এক মাসের জন্য শতভাগ নিষেধাজ্ঞা সম্ভব, এর বেশি নয়।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন