কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তারপরেও, শতাব্দী প্রাচীন মোরবি সেতু (Morbi Bridge) রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য বরাত পেয়েছে গুজরাটের ‘ওরেভা গ্রুপ’ (Oreva Group)। পুরোটাই ঘটেছে রাজনৈতিক সংযোগের কারণে। রবিবার রাতে, মোদী-অমিত শাহের রাজ্যে মোরবি সেতু দুর্ঘটনায় ১৩৪ জনের প্রাণহানির পর এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে।
ন্যাশনাল হেরাল্ডে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের মার্চ মাসে সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ/পরিচালনার জন্য ১৫ বছরের বরাত দেওয়া হয়েছে আহমেদাবাদ ভিত্তিক সংস্থা ওরেভা গ্রুপকে। কিন্তু, এই কাজের জন্য কোনও অভিজ্ঞতাই এই গ্রুপের।
জানা যাচ্ছে, আহমেদাবাদের ‘ওরেভা গ্রুপ’ মূলত ‘অজন্তা’ (Ajanta) দেয়াল ঘড়ি তৈরির জন্য বিখ্যাত। এছাড়া এই সংস্থার ই-বাইক (ব্যাটারি চালিত বাইক), গার্হস্থ্য সরঞ্জাম, টেলিফোন, ক্যালকুলেটর, এলইডি টিভি তৈরিতে দক্ষতা রয়েছে। কোম্পানির ওয়েবসাইটে তা উল্লেখও করেছে ‘ওরেভা গ্রুপ’।
তবে লক্ষণীয়, এই সংস্থা ওয়েবসাইটে কোথাও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ/পরিচালনার বিষয়ে নিজেদের দক্ষতার দাবি করেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোরবি পৌর কর্পোরেশনের এক আধিকারিক জানান, পৌরসভার কয়েকজন আধিকারিক এই বিষয়ে (দক্ষতা না থাকা নিয়ে) প্রশ্ন তুলেছিলেন। তবে, রাজনৈতিক সংযোগের কারণে ওরেভাকে বরাতটি দিয়েছিলেন শীর্ষ আধিকারিকরা।
চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মোরবি পৌর কর্পোরেশনের অধীনেই ছিল এই সেতুটি।
আমেদাবাদ থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ১৫০ বছরের পুরনো এই সেতু। টানা ৭ মাস ধরে সেতুটির মেরামতি হয়েছে।
তারপরেও সেতুটি ভেঙে পড়া নিয়ে মোরবি পৌরসভার চিফ অফিসার সন্দীপ সিং জালা (Sandeepsinh Zala) জানান, ‘সেতুটি মোরবি পৌরসভার একটি সম্পত্তি। কিন্তু, কয়েক মাস আগে ১৫ বছরের মেয়াদে সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য ওরেভা গ্রুপকে হস্তান্তর করেছি আমরা। যাইহোক, আমাদের না জানিয়েই দর্শনার্থীদের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দিয়েছে এই সংস্থা। তাই, সেতুটির নিরাপত্তা নিরীক্ষা করাতে পারিনি আমরা।’
এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গুজরাট কংগ্রেসের মুখপাত্র মণীশ দোশি (Manish Doshi)। তিনি বলেন, ‘সবকিছুই তাঁদের হাতে। ঘটনার পর পৌরসভা কেন কান্নাকাটি করছে? কেন তারা আগে পরীক্ষা করেনি?’
কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘কোম্পানীর মালিকের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের ঘনিষ্ঠতা সর্বজনবিদিত। তারা বিজেপির একান্ত অনুগত।’
দোশি দাবি করেন, ‘গুজরাট সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা এই দুর্নীতির সাথে জড়িত’। তিনি বলেন, ‘ভাবুন তো একবার! একটি ঘড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাকে সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
এরপরে, মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেলকে নিশানা করে দোশি বলেন, ‘নগরোন্নয়ন মন্ত্রক মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে। এই ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। কারণ তিনি জানতেন যে, ঘড়ি তৈরির কোম্পানির এই ধরনের পরিকাঠামো পরিচালনা/রক্ষণাবেক্ষণের কোনো অভিজ্ঞতা নেই।’
কেন সেতুটি এখন চালু করা হয়েছে জানতে চাইলে দোশি জানান, ‘রাজনৈতিক লাভের জন্য।’
অন্য এক কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘উন্নয়ন দেখিয়ে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ভোট পেতে, ওরেভাকে সেতুটি খোলার অনুমতি দিয়েছে বিজেপি সরকার। এটা দুর্ভাগ্যজনক। আর, এখন তারা একে অপরকে দোষারোপ করছে।’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন