বিচারাধীন জ্ঞানব্যাপী মসজিদ নিয়ে ‘আপত্তিকর’ পোস্ট করায় দিল্লির এক অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করেছে দিল্লি পুলিশ। ধৃত অধ্যাপকের নাম রতন লাল। গেপ্তারির পর দিল্লির অধ্যাপক রতন লাল দাবি করেছেন, ‘নাগরিকদের বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।’ তবে, অধ্যাপক লালের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে আইনজীবি বিনীত জিন্দাল জানিয়েছেন, ‘এই অধিকারের অপব্যবহার কখনই কাম্য নয়।’
জানা যাচ্ছে, ফেসবুকে জ্ঞানব্যাপীতে 'শিবলিঙ্গ আবিস্কার’ নিয়ে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করেছিলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন হিন্দু কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক রতন লাল। বিষয়টি দিল্লি পুলিশের নজরে আনেন দিল্লির আইনজীবী বিনীত জিন্দাল। এরপরেই শুক্রবার রাতে অধ্যাপক রতন লালকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ড বিধির একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। আজ তাঁকে তিস হাজারী আদালতে পেশ করা হবে।
দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার সাগর সিং কালসি জানিয়েছেন, ‘ইতিহাসের অধ্যাপক রতন লাল ফেসবুকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট করার অভিযোগে, তাঁকে গেপ্তার করা হয়েছে। উত্তর দিল্লির সাইবার থানার তরফে ১৫৩ এ, ২৯৫-এ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবারই বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে অধ্যাপক লালের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন দিল্লির আইনজীবী বিনীত জিন্দাল। তিনি অভিযোগ করেন, ‘শিবলিঙ্গ নিয়ে যে পোস্ট অধ্যাপক করেছেন, তা আপত্তিজনক এবং বিশেষ সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্যে লেখা। অধ্যাপকের এই ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ কাজের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’ এর পরেই শুক্রবার রাতে ওই অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ।
এদিকে, এই গ্রেফতারি প্রসঙ্গে অধ্যাপক লাল জানিয়েছেন, ‘ভারতে এখন স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার কারও নেই। কোনও কিছু বিষয়ে খোলাখুলি কথা বললে কেউ না কেউ আপত্তি করবে। বলবে, এই মন্তব্য অন্য কারও ভাবাবেগে আঘাত করতে পারে। সুতরাং, এটা আর নতুন কিছু নয়। আমি ইতিহাসের অধ্যাপক। তাই, অধ্যাপক হওয়ার সুবাদে আমি গবেষণা করে দেখেছি, জ্ঞানবাপী মসজিদে শিবলিঙ্গ রয়েছে। আমার মতামত বা পর্যবেক্ষণ অন্য কারও পছন্দ নাই হতে পারে।’
তবে, অধ্যাপক লালের বক্তব্যকে একহাত নিয়েছেন আইনজীবি বিনীত জিন্দাল। তিনি সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘আমাদের সংবিধান প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিককে বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান করেছে। কিন্তু এই অধিকারের অপব্যবহার কখনই কাম্য নয়। দেশের সম্মান ও নিরাপত্তা এবং সাম্রদায়িক সম্প্রীতিকে হুমকির মুখে ফেলে, এমন মন্তব্যকে গুরুতর অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ধর্মের ভিত্তিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা তৈরির চেষ্টা আসলে ভারতের মতো একটি ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক দেশে আদর্শ বিরুদ্ধ কাজ এবং আইন অনুসারে এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ।’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন