অবশেষে হরিয়ানার নুহতে থামল বুলডোজারের হানাদারি। আদালতের হস্তক্ষেপের পরেই হরিয়ানা প্রশাসনের তরফে বন্ধ করে দেওয়া হল উচ্ছেদ অভিযান। হরিয়ানার নুহতে গত কয়েকদিন ধরে চলা হিংসা ও তারপর রাজ্য প্রশাসনের তরফে বুলডোজার চালিয়ে একেরপর এক ঝুপড়ি, দোকান ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া নিয়ে সোমবার একটি সুয়ো মোটো মামলা গ্রহণ করেছে পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্ট। সেই মামলায় আদালতের নির্দেশের পরেই উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে রাজ্য প্রশাসনের তরফে জানিয়েছেন নুহ’র ডেপুটি কমিশনার ধীরেন্দ্র খাদগাতা।
গত ৩১ জুলাই নুহতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আয়োজিত এক ধর্মীয় মিছিল ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত। ওই মিছিলকে কেন্দ্র করেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই দল। সাম্প্রদায়িক এই হিংসা তারপর নুহ ছাড়িয়ে গুরগাঁওতেও ছড়িয়ে পড়ে। নিহত হন ৬ জন। বহু মানুষ আহত হয়ে ভর্তি হন হাসপাতালে। এখনও পর্যন্ত এই হিংসার ঘটনায় ৫৬টি এফআইআর দায়ের হয়েছে এবং পুলিশের তরফে ওই হিংসায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপরেই হরিয়ানা প্রশাসনের তরফে বুলডোজার চালিয়ে নুহতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার নুহ থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে তাউরু অঞ্চলে প্রায় ২৫০-এরও বেশি ছোট ঝুপড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় অসংখ্য বাড়ি-ঘর, দোকানপাট, গাড়ি। স্থানীয় প্রশাসন জানায়, ওই হিংসায় অংশগ্রহণকারীদেরই ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যদিও এলাকাবাসীদের দাবি, প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেনে-বুঝে পরিযায়ী শ্রমিকদেরই ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ওখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই ছিল পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক। এরপর থেকেই হরিয়ানা প্রশাসনের এই উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরের সরকার ইচ্ছে করে বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণ চালিয়েছে।
সোমবার এই উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টের তিন আইনজীবী এক স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেন। বিচারপতি জি.এস সান্ধাওয়ালিয়ার বেঞ্চ এই মামলা গ্রহণ করে যত দ্রুত সম্ভব ওই উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের পরেই নুহতে বুলডোজার ব্যবহার করে উচ্ছেদের কাজ বন্ধ করে হরিয়ানার বিজেপি প্রশাসন। তবে এখনও পর্যন্ত ওই অঞ্চলে কার্যত শ্মশানের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন