সম্প্রতি, হরিয়ানায় গেরুয়া বাহিনীর হাতে খুন হন দুই মুসলিম যুবক জুনায়েদ (৩৫) ও নাসির (২৫)। অভিযোগ ওঠে, গো-রক্ষার নামে তাঁদেরকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে বজরং দলের সদস্যরা। কিন্তু, ১০ দিন পার হয়ে গেলেও হত্যাকারীরা এখনও শাস্তি পায়নি। তাই, জুনায়েদ ও নাসিরের জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে সরব হয়েছে স্থানীয়রা। বিক্ষোভ চলছে ফিরোজপুর ঝিরকা এলাকায়।
এই পরিস্থিতিতে, নুহ জেলা জুড়েই মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা, এসএমএস ও সমস্ত ডঙ্গল মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করেছে হরিয়ানা সরকার। এই বিষয়ে হরিয়ানার স্বরাষ্ট্র বিভাগের পক্ষ থেকে এক নোটিশ জারি করা হয়েছে। ওই নোটিশে বলা হয়েছে, ‘সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, সংঘাত, মানুষের জীবন ও সম্পত্তি নষ্ট, জনসাধারণের শান্তি ব্যাহত হওয়ার সম্ভাব্য কারণ দেখা দিয়েছে।’
দ্য ওয়ারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, ইন্টারনেট বন্ধ রাখার যুক্তি হিসাবে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভুল তথ্য ও গুজব ছড়ানো রুখতে এটি প্রয়োজন ছিল। এই স্থগিতাদেশ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।’
সূত্র অনুসারে, ১৮৮৫ সালের ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফ অ্যাক্ট-এর ৫ নম্বর ধারা এবং ২০১৭ সালের টেলিকম পরিষেবা বিধির ২ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে ইন্টারনেট বন্ধের এই নির্দেশিকাটি জারি করা হয়েছে।
হরিয়ানার স্বরাষ্ট্র দফতরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব টি. ভি. এস. এন. প্রসাদ বলেন, ‘নুহ জেলায় শান্তি ও শৃঙ্খলার যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে, তাই এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।’
তবে, এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে হরিয়ানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
অন্যদিকে, এই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের যাতে গ্রেফতার না-করা হয়, সেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলি। গত ২১ ফেব্রুয়ারি, হরিয়ানার মানেসরে এবং ২২ ফেব্রুয়ারি, হাথিনে ‘হিন্দু মহাপঞ্চায়েতে’র আয়োজন করে বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও হিন্দু সেনার মতো নানা সংগঠন।
দুই সমাবেশেই, রাজস্থানের পুলিশ যাতে এই হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত মনু মানেসর ও তার সহযোগীদের আটক করার স্পর্ধা না-দেখায়, সেই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর, এই হত্যাকান্ডে রাজস্থান পুলিশ যে এফআইআর দায়ের করেছে, তাতে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত হলেন মনু মানেসর। যিনি বজরং দলের একজন নেতা এবং হরিয়ানার গোরক্ষা টাস্ক ফোর্সেরও একজন সদস্য। বাকি অভিযুক্তেরা হলেন লোকেশ সিংগিয়া, রিংকু সাইনি, অনিল এবং শ্রীকান্ত। সকলেই নিজেদের গো-রক্ষক বলে দাবি করেছে।
উল্লেখ্য, internetshutdowns.in এর তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে ভারতে এখনও পর্যন্ত ৬টি ইন্টারনেট শাট ডাউনের ঘটনা ঘটেছে। প্রথম ঘটনাটি ঘটে বিহারের সারণে ৮ ফেব্রুয়ারি। দ্বিতীয়টি ঝাড়খন্ডের পালামৌতে ১৫ ফেব্রুয়ারি। তৃতীয় ঘটনাটি ১৭ ফেব্রুয়ারির। সেবার অরুণাচল প্রদেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজস্থানের ভরতপুর, জয়পুর, কোটা, আজমেঢ়,, ভিলওয়াড়া, টঙ্ক এবং আলোয়ারে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি হরিয়ানার নুহ-তে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ওইদিনই ফের ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয় রাজস্থানের কিছু অঞ্চলে।
ভারতে ২০১৬ সাল থেকে ইন্টারনেট শাটডাউনের ঘটনা বেড়েছে। ২০১৬ সালে ৩১ বার ইন্টারনেট শাটডাউন হয় দেশের বিভিন্ন রাজ্যে। ২০১৭ সালে এই ঘটনা বেড়ে হয় ৭৯। ২০১৮ সালে ১৩৫টি, ২০১৯-এ ১০৯টি, ২০২০তে ১৩২টি, ২০২১-এ ১০১টি এবং ২০২২ সালে ৭৫টি ইন্টারনেট শাটডাউনের ঘটনা ঘটেছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন