বহু ধর্মের মানুষের দেশ ভারত (India)। সংবিধান অনুসারে ভারত একটি ‘ধর্ম-নিরপেক্ষ’ (Secular) রাষ্ট্র। সেখানে কোনও ধর্মকে নিয়ে বাড়াবাড়ি বা কোনও সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো মেনে নিতে পারছে না সুপ্রিম কোর্ট (The Supreme Court)। শুক্রবার, দেশে চলমান ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শীর্ষ আদালত প্রশ্ন তুলেছে 'এখন ২১ শতক। ধর্মের নামে আমরা কোথায় পৌঁছেছি?'
এক পর্যবেক্ষণে আদালত জানিয়েছে, ‘ভারতকে ধর্ম-নিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলা হয়, সেখানে এই পরিস্থিতি হতাশাজনক।’
গত বুধবার, ৩ দিনের ভারত সফরে এসে দেশে ক্রমবর্ধমান মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা (Hate Speech) নিয়ে মোদী সরকারের সমালোচনা করেছিলেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস (Antonio Guterres)। সেই রেশ না কাটতেই- বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা ও সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের সমালোচনা করল শীর্ষ আদালত।
ভারতে বার বার সন্ত্রাসবাদী ক্ষেত্রে মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। তা বন্ধ করতে জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে জরুরি ভিত্তিতে আবেদন করা হয়। এই আবেদন জানান শাহীন আবদুল্লাহ।
জানা যাচ্ছে, এরপরেই ‘ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট ও হুমকি’ বন্ধের জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলি কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
এই মামলার শুনানি চলাকালীন দেশে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি বা কোনও সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে শীর্ষ আদালত।
চলতি মাসের শুরুতে, দিল্লিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক সভায় বক্তা হিসেবে ছিলেন জগৎ গুরু যোগেশ্বর আচার্য। তিনি বলেন, ‘যদি দরকার হয়, হাত কেটে নাও। গলা নামিয়ে দাও। সবচেয়ে বেশি তোমার জেল হবে। কিন্তু এই সমস্ত লোককে উচিত শিক্ষা দেওয়ার সময় এসেছে। বেছে বেছে মারো।’
শুধু তাই নয়, পশ্চিম দিল্লির বিজেপি সাংসদ পারভেশ ভার্মা হিন্দু সভার একটি বৈঠকে মুসলিম সম্প্রদায়কে সামাজিকভাবে বয়কটের ডাক দেন। তিনি বলেন,‘ওদের সবজি কিনবেন না। ওরা মাছ-মাংসের দোকান খুলে বসবে। ওদের সোজা করতে সামাজিক বয়কট করুন।’
আদালতে এই বক্তব্যগুলি তুলে ধরেন মামলাকারীর আইনজীবি কপিল সিব্বাল। তিনি আদালতে ঘৃণামূলক অপরাধ এবং ঘৃণাত্মক বক্তৃতা রোধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (UAPA) এবং অন্যান্য কঠোর বিধান প্রয়োগের আর্জি জানিয়েছেন।
দুদিন আগেই ভারতে ক্রমবর্ধমান ঘৃণা ও উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস তীব্র সমালোচনা করেন। মুম্বইয়ের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, 'মানবাধিকার কাউন্সিলের একজন নির্বাচিত সদস্য হিসাবে, ভারতের একটি দায়িত্ব রয়েছে বিশ্বে মানবাধিকার গঠন করা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য সহ সকল ব্যক্তির অধিকার রক্ষার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া।'
মহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহেরুর অবদানের কথা উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, 'বিদ্বেষমূলক বক্তব্যকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা করতে হবে এবং এঁদের মূল্যবোধকে রক্ষা করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, ছাত্র এবং শিক্ষাবিদদের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে ভারতকে। ভারতের বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও নিশ্চিত করতে হবে।'
গুতেরেসের মতে, 'দেশের অভ্যন্তরে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তা রক্ষার মাধ্যেমে ভারত বিশ্বের দরবারে নিজেদের কর্তৃত্ব এবং বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারে।'
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন