নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে, গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (NGO)-র ফরেন কন্ট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট (FCRA) লাইসেন্স বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যা ঘিরে দেশীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।
রবিবার, রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন (RGF) এবং রাজীব গান্ধী চ্যারিটেবল ট্রাস্ট (RGCT) নামে দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (NGO)-র ফরেন কন্ট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট (FCRA) লাইসেন্স বাতিল করে অমিত শাহের অধীনে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
পুরো ঘটনাকে 'প্রতিহিংসার রাজনীতি' বলে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস (Congress)। কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ (Jairam Ramesh) এদিন বলেছেন, "দেশের অর্থনীতি গভীর সঙ্কটে। চড়া মূল্যবৃদ্ধি ও ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের জেরে দেশবাসী জেরবার। যখন তাঁরা স্পষ্টতই ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে বীতশ্রদ্ধ, তখন কংগ্রেসের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করার জন্য ও দৈনন্দিন সমস্যা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য মোদী সরকার লক্ষ্যবস্তু বানালো দুই এনজিও-কে।"
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা অশোক গেহলটের কথায়, রাজনৈতিক বিদ্বেষ থেকেই এই পদক্ষেপ।
২০২০ সালের জুন মাসে লাদাখে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ হয়। ভারত-চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তিক্ত হয়। এসময় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা অভিযোগ তোলেন, ২০০৫ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনকে অর্থ দিয়েছে চীন। সেই অর্থ দিয়ে ওই ফাউন্ডেশন এমন কাজ করেছে, যা জাতীয় স্বার্থের পক্ষে ছিল না।
তবে বিদেশি অনুদান হিসাবে চীনের থেকে অর্থ নেওয়া নিষিদ্ধ কি না, সে সম্পর্কে নাড্ডা কিছু বলেননি।
নাড্ডার এই অভিযোগের পর, ২০২০'র জুলাইয়েই কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ পরিচালিত তিনটি সংস্থার আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখতে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
ওই তদন্ত কমিটিকে তিনটি বিষয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছিল। এগুলির মধ্যে ছিল - ১) আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে নথির কারচুপি ২) তহবিলের অর্থের অপব্যবহার এবং ৩) বিদেশি অনুদানের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত অর্থের নয়ছয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক সূত্র দাবি করেছে, তিনটি ক্ষেত্রেই বেনিয়ম করেছে রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন এবং রাজীব গান্ধী চ্যারিটেবল ট্রাস্ট। এই তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই রাজীব গান্ধীর নামে দুটি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
প্রসঙ্গত, রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনে ট্রাস্টি হিসাবে রয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, প্রাক্তন অর্থ মন্ত্রী পি চিদাম্বরম, কংগ্রেসের সাংসদ রাহুল গান্ধী, দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মন্টেক সিং আলুওয়ালিয়া, লেখক ও সাংবাদিক সুমন দুবে এবং প্রাক্তন সাংসদ ও শিল্প বিশেষজ্ঞ অশোক গাঙ্গুলি।
অন্যদিকে, রাজীব গান্ধী চ্যারিটেবল ট্রাস্টে রাহুল গান্ধী ও অশোক গাঙ্গুলি ছাড়াও ট্রাস্টি হিসাবে আছেন দুই চার্টার্ড আকাউন্টটেন্ট বংশী মেহতা ও দীপ যোশী।
১৯৯১ সালে তৈরি রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন, যা স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, মহিলা ও শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কল্যাণমূলক কাজে যুক্ত। ২০০২ সালে তৈরি রাজীব গান্ধী চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গ্রামীণ গরিব মানুষ সহ দেশের অনগ্রসর শ্রেণীর উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে।
জনসমর্থন পেতে দেশজুড়ে 'ভারত জোড়ো যাত্রা' করছে কংগ্রেস। নতুন করে উন্মাদনাও দেখা দিয়েছে কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে। ঠিক সেই মুহূর্তে কেন্দ্রের এই ঘোষণা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
কংগ্রেস প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, গান্ধী পরিবারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাইছে বিজেপি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন