দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (NHRC)-এর রিপোর্ট পেশ করে সে কথায় জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই।
রাজ্যসভায় এক প্রশ্নোত্তর পর্বে নিত্যানন্দ রাই জানিয়েছেন, ২০২০-২০২১ সালে ৭৪,৯৬৮ টি মামলা নথিভুক্ত করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (NHRC)। একইসঙ্গে, ২০২১-২০২২ সালে (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত) এই ধরনের ১,০২,৫৩৯ টি মামলা নথিভুক্ত করেছে কমিশন। অর্থাৎ, গত দুই অর্থ বছরে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৭ শতাংশ।
সংসদে প্রতি বছর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করে থাকে কেন্দ্র। কিন্তু, ২০১৯ সাল থেকে তা প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তবে, গত বাজেট অধিবেশনে পরিসংখ্যান-সহ একটি রিপোট রাজ্যসভায় পেশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার (Amnesty International India) প্রাক্তন কর্মকর্তা অভিনাশ কুমার। তিনি বলেন, 'লঙ্ঘনের এই ঊর্ধ্বগতি আসলে, মানবাধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রের ব্যর্থতাকে প্রমাণ করে। তারপরেও, আমরা রাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিস্তারিত তথ্য চাই। যেটি কেবল NHRC বার্ষিক রিপোর্টে পাওয়া যায়।'
কেন গত ৩ বছর NHRC বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি? এই প্রশ্নের জবাবে, গত মার্চ মাসে রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানিয়েছেন, 'জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এখন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কমিশনের সুপারিশের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের প্রতিক্রিয়া বা মন্তব্য পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।'
রাজ্যসভায় প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ জানান, 'NHRC-র ২০১৯-২০ সালের বার্ষিক রিপোর্টে যে প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে, তা ভারত সরকারের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের সাথে সম্পর্কিত। এজন্য সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রককে গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে স্মারকলিপি প্রস্তুত করতে হয়।'
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বৃদ্ধির সঙ্গে আর একটি ঘটনা ঘটেছে। তা হল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশকৃত মোট আর্থিক ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হ্রাস পাওয়া। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন মানবাধিকার কর্মীরা। এই প্রসঙ্গে অভিনাশ কুমার জানান, '২০১৮-২০১৯ এবং ২০১৯-২০২০ সালে জাতীয় কমিশন দ্বারা সুপারিশকৃত ক্ষতিপূরণের পরিমান হ্রাস পেয়েছে ৩০ শতাংশ। তখন থেকেই এটি কমে আসছে।'
২০২১ সালের ডিসেম্বরে রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, '২০১৮-২০১৯ সালে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে ৭১৩ টি মামলায় আর্থিক ত্রাণ হিসাবে ২৭ কোটি ৬৭ লক্ষ ৫৪ হাজার ৯৯৬ টাকা সুপারিশ করা হয়েছে। ২০১৯-২০২০ সালে ৪৮৮ টি মামলার উপর ১৫ কোটি ৬ লক্ষ ৮৫ হাজার ৮৪০ টাকা সুপারিশ করা হয়েছে।
একই উত্তরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আরও জানিয়েছে, '২০২১-২০২২ অর্থবর্ষে ৩১ অক্টোবর ২০২১ নাগাদ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ৬৪,১৭০ টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৪,২৪২ টি মামলা উত্তরপ্রদেশের। মোট শতাংশের হিসাবে যা ৩৭.৭ শতাংশ।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার প্রাক্তন কর্মকর্তা অভিনাশ কুমার আরও বলেন, 'মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। মানবাধিকার কর্মীদের নির্যাতন এবং কারাগারে রাজনৈতিক বন্দীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার আমলে নিচ্ছে না NHRC। এমনকি, রাষ্ট্রসংঘের বিশেষ প্রতিবেদনও উপেক্ষা করা হচ্ছে।'
গত ২৫ জুন, গুজরাট পুলিশ যেভাবে বিশিষ্ট সমাজকর্মী তিস্তা শীতলবাদ (Teesta Setalvad)-কে গেপ্তার করেছে, তা নিয়ে 'গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক মেরি ললর (Mary Lawlor)।
শেতলবাদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রসংঘের কর্মকর্তা বলেছেন, 'গুজরাট পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড (ATS) সমাজকর্মী তিস্তা তিস্তা শীতলবাদকে গেপ্তার করা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ঘৃণা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হল তিস্তা। মানবাধিকার রক্ষা করা কোনও অপরাধ নয়। আমি তার মুক্তির আহ্বান জানাই এবং ভারত সরকার কর্তৃক নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার অবসান চাই।'
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন