হায়দরাবাদ পুলিশের জালে ধরা পড়ল এক বড়ো সাইবার জালিয়াতি চক্র। গত এক বছরেরও কম সময়ে এই চক্র দেশ জুড়ে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার প্রতারণা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। প্রতারিত হয়েছেন ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। তবে পুলিশের দাবি, প্রতারিত মানুষের সংখ্যা সঠিকভাবে বলা হম্ভব নয়। ১৫ হাজারের জায়গায় ওটা ৫০ হাজারও হতে পারে। এই প্রতারণার সঙ্গে চিনের প্রত্যক্ষ যোগসূত্রও মিলেছে। এমনকি জালিয়াতির টাকা পাঠানো হয়েছে লেবাননের জঙ্গী গোষ্ঠী হেজবল্লাহের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও। নিজাম শহরের পুলিশ ইতিমধ্যেই ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশের তরফে কমিশনার সিভি আনন্দ এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত এপ্রিল মাসে জনৈক ব্যক্তি প্রায় ২৮ লক্ষ টাকার প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন। তারপরেই ঘটনার তদন্তে নামে হায়দরাবাদ পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগ।
জানা যায়, গোটা দেশ জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। প্রতারকরা মূলত প্রথমে আংশিক সময়ের কাজ ও বিনিয়োগের ফাঁদ পেতে মানুষকে ফাঁসাতো। ইউটিউব ভিডিওতে লাইক করা বা গুগুলে রিভিউ লেখার মতো ছোটখাটো কাজের লোভ দেখিয়ে জালিয়াতির প্রাথমিক ছক কষা হত।
আবার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে হাজার পাঁচেক টাকার অল্প টাকা বিনিয়োগ করিয়ে মোটা অঙ্কের লাভ-সহ সেই টাকা ফেরত দিয়ে বিশ্বাস অর্জন করত প্রতারকরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথমবার দ্বিগুণ অঙ্কের টাকাও ফেরত দেওয়া হত। তারপর বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে বলা হত। কয়েকলক্ষ বিনিয়োগ করলেই কাজ হাসিল করে পাততাড়ি গুটিয়ে ভাগলবা প্রতারকরা।
প্রাথমিক তদন্তের পর এই জালিয়াতির মূলে চিনা হ্যাকারদের হাত রয়েছে বলেই অনুমান পুলিশের। তবে প্রাথমিকভাবে পুলিশের মনে হয়েছিল, প্রতারণা করা হয়েছে ৫২৮ কোটি টাকার। যদিও তদন্ত যত এগিয়েছে, ততই বেড়েছে টাকার অঙ্ক। পাশাপাশি, এই প্রতারণার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এমন প্রায় ১১৩টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছে পুলিশ।
হায়দরাবাদের পুলিশ কমিশনার সিভি আনন্দ আরও জানিয়েছেন, “জালিয়াতির টাকা দুবাই হয়ে চিনে পৌঁছে যেত। এমনকি ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে লেবাননের জঙ্গী গোষ্ঠী হেজবল্লাহের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও টাকা পাঠানো হয়েছে। অসংখ্য ভুয়ো সংস্থার নামে টাকা লেনদেন হয়েছে। আমরা বিষয়টি সমস্ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সাইবার অপরাধ বিভাগকেও জানিয়েছি। তাঁরাও এই নিয়ে বিশদে তদন্ত করবেন।”
এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত মোট ৯ জনকে এখনও পর্যন্ত পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আটক হওয়া অভিযুক্তদের মধ্যে ৪ জন হায়দরাবাদের, ৩ জন মুম্বই এবং ২ জন আহমেদাবাদের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। তবে আরও ৬ জন অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে হায়দরাবাদ পুলিশ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন