দিল্লি সার্ভিসেস বিল নিয়ে রাজ্যসভার সাংসদ তথা প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। সোমবার রাজ্যসভায় প্রথমবার বক্তব্য রাখতে গিয়ে গগৈ ওই বিল নিয়ে দেশের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পাশাপাশি, দিল্লির অর্ডিন্যান্স বিলকে তিনি পুরোপুরি সমর্থন করেন বলেও জানিয়েছেন। যা নিয়ে কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ কেসি ভেনুগোপাল দেশের প্রাক্তন সিজিআইকে নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন।
২০২০ সালে রাজ্যসভার প্রার্থী মনোনীত হওয়ার পর সোমবার প্রথমবার সভার অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে ওঠেন রঞ্জন গগৈ। দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিল নিয়ে এদিন রাজ্যসভায় বিতর্ক চলাকালীনই তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করেন, “আমাদের সাংবিধানিক পরিকাঠামো অনুযায়ী, রাজ্য বিধানসভাগুলি ওই সংশ্লিষ্ট রাজ্যের আইন প্রণয়ন করে। রাজধানী দিল্লি-সহ অন্যান্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির আইন প্রণয়ন করে সংসদ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দিল্লির এই অর্ডিন্যান্স বিল কি আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো লঙ্ঘন করে?”
তিনি জানান, “এটি একটি অপ্রতিসম ফেডেরালিজম। যেহেতু দিল্লি একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তাই সেক্ষেত্রে এই বিলটি ফেডেরালিজমের একটি মিশ্রিত রূপ প্রদান করে। আমার মনে হয় না এই বিল সংবিধানের কোনও অংশকে লঙ্ঘন করে। এই বিল সম্পূর্ণভাবে বৈধ এবং আমি এই বিলকে সমর্থন করি।” তিনি এর সঙ্গেই যোগ করেন, “যদি আপনারা দিল্লির জন্য পুরোদস্তুর ফেডেরালিজম চান, সেক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন করে দিল্লিকে একটি আলাদা রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন।”
প্রাক্তন সিজিআই-এর এই মন্তব্যের পাল্টা কং নেতা ভেনুগোপাল টুইট করে লিখেছেন, “একজন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সংবিধানের মৌলিক কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, এটা আমার কাছে খুব আশ্চর্যের বিষয়। এটা কি বিজেপির কোনও নতুন চাল? ওরা কি সংবিধানকে পুরোপুরি পাল্টে দিতে চায়? ওরা কি মনে করে গণতন্ত্র, সাম্য, ফেডেরালিজম, ধর্মনিরপেক্ষতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা; এই সবই বিতর্কিত ধারণা? তবে এটা আমাকে অবাক করে না। ওরা কোনওদিনই সংবিধানকে সম্মান করেনি। এখন একজন প্রাক্তন বিচারপতিকে দিয়ে ওরা দেশের সংবিধানকে আক্রমণ করাচ্ছে।”
ভেনুগোপালের আরও বক্তব্য, “রঞ্জন গগৈ কি বলতে চাইছেন সংবিধানের কোনও মৌলিক কাঠামো নেই? তাই কিছুই রক্ষা করার নেই? সরকারের উচিত অবিলম্বে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির এই মন্তব্যের বিরোধীতা করা। তা না হলে এটা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে বিজেপি দেশের সংবিধানকে ধ্বংস করার কাজ শুরু করে দিয়েছে।”
উল্লেখ্য, এদিন রঞ্জন গগৈ রাজ্যসভায় বক্তব্য রাখতে উঠলেই বিরোধী মহাজোটের শরীক সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জয়া বচ্চন, শিবসেনা (ইউবিটি) সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী, টিএমসি সাংসদ সুস্মিতা দেব, এনসিপি সাংসদ বন্দনা চাভানরা সভা থেকে উঠে বেরিয়ে যান। ২০২০ সালে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে গগৈর মনোনয়নের সময় তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্থার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই এই প্রতিবাদ বলে জানা গিয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন