আগামী ২২ জানুয়ারী রামমন্দির উদ্বোধন। তবে ধর্মীয় নিয়ম মেনে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। এমনই দাবি করে সবর হয়েছিলেন শঙ্করাচার্য। এবার সেই একই সুরে সুর মেলাতে শোনা গেল নির্মোহী আখড়াকেও।
রামমন্দির উদ্বোধন ঘিরে দেশজুড়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। এর আগে শাস্ত্রীয় রীতি মেনে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না বলে সরব হয়েছিলেন গোবর্ধন পীঠ, পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী। দুদিন আগে তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর রামমন্দির নিয়ে এত উত্তেজনা ‘উন্মাদের লক্ষণ’।
স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতীর পর এবার নির্মোহী আখড়াও অভিযোগ করেছে, রামলালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’য় ‘রামানন্দী’ সনাতন ঐতিহ্য মানা হচ্ছে না। ৫০০ বছর ধরে যে নিয়ম চলে আসছে প্রাণ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছেনা। তাদের দাবি, রামলালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’য় আখড়ার দেওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে রামমন্দির কর্তৃপক্ষ।
ডেকান হেরাল্ডের প্রতিবেদন অনুসারে, নির্মোহী আখড়ার এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ‘‘রামলালার পুজো চিরকাল রামানন্দীর ঐতিহ্য মেনে হয়ে এসেছে। কিন্তু শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রে ট্রাস্ট এ বার এক মিশ্র ঐতিহ্য অনুসরণ করছে। যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বলেছিলাম, প্রথা মেনে রামলালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ হোক। কিন্তু আমাদের বক্তব্যকে উপেক্ষাই করা হয়েছে।’’
এর আগে উত্তরাখণ্ডের জ্যোতিষপীঠের শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দ রবিবারই সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছিলেন, ‘‘আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু শাস্ত্র বলছে, প্রতিষ্ঠা তখনই সম্ভব, যখন মন্দির সম্পূর্ণ হয়। কারণ, মন্দির হল ঈশ্বরের দেহ। দেহ সম্পূর্ণ না হলে তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় কী ভাবে?’’
এই বিষয়ে তাঁর ব্যাখ্যা ছিল, মন্দির যদি দেহ হয়, তবে তার চূড়ার শীর্ষ বিন্দুটি বা শিখর হল ঈশ্বরের চোখ। মাথার গম্বুজটি ঈশ্বরের মাথা। মন্দিরের মাথায় যে পতাকা ওড়ে, তা হল ঈশ্বরের চুলের প্রতীক। অথচ রাম মন্দিরে এর কোনোটিই সম্পূর্ণ হয়নি। তাই ঈশ্বরের দেহ সেখানে অসম্পূর্ণ। সেই অসম্পূর্ণ দেহে ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’র অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার অর্থ জেনেশুনে শাস্ত্র লঙ্ঘনে সায় দেওয়া।
যদিও শঙ্করাচার্যের এই দাবিকে কংগ্রেসের সুরে কথা বলছেন বলে পাল্টা দাবি করে বিজেপি। গঙ্গাসাগরে সোমবার তার জবাবে শঙ্করাচার্য আবারও বলেন, ‘‘কংগ্রেসের আমলে আমি যখন কিছু বলতাম, তখন কি জনসঙ্ঘের হয়ে বলতাম? আমার সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের যোগ নেই। এটা মোদী, যোগী (যোগী আদিত্যনাথ), সোনিয়া (সোনিয়া গান্ধী) প্রত্যেকে জানেন।’’
এ দিন গঙ্গাসাগরে শঙ্করাচার্য বলেন, ‘‘যার কথায় লোভ, ভয় এবং উদ্বেগ থাকে, তার কথার কোনও প্রভাব পড়ে না। আমার কথায় লোভ, ভয় এবং উদ্বেগ নেই। তাই আমার কথার প্রভাব পড়ে। ক্ষমতার পরিবর্তন হয়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘অতীতে আমার সঙ্গে যাঁরা টক্কর নিয়েছেন, তাঁরা চুরমার হয়ে গিয়েছেন!’’
এই প্রসঙ্গে পি ভি নরসিংহ রাও, জ্যোতি বসু, মুলায়ম সিংহ যাদব এবং লালুপ্রসাদ যাদবের উদাহরণ টেনে ধর্মগুরুর দাবি, ‘‘এঁরা আমার সঙ্গে টক্কর নিয়েছিলেন। আমাকে কিছু করতে হয়নি। এঁরা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন।’’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন