বাড়ছে লাভ জিহাদ! তাই নবরাত্রিতে গরবা নাচে অংশ নিতে গেলে পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক বলে জানালো মধ্যপ্রদেশ সরকার। নবরাত্রি উৎসবের ঠিক আগে, এমনই নির্দেশ দিলেন বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী ঊষা ঠাকুর। মন্ত্রীর এই নির্দেশের জেরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক।
গোয়ালিয়রে সাংবাদিকদের মুখোমুখি উষা জানান, ‘‘গরবা প্যান্ডেলগুলি ক্রমশ লাভ জিহাদের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। তাই, এখন থেকে আর পরিচয়পত্র ছাড়া সেখানে প্রবেশ করা যাবে না।’’
গরবা হল হিন্দুদের একটি বিশেষ ঐতিহ্যপূর্ণ নৃত্য। যা মধ্যপ্রদেশে নবরাত্রির ৯ দিন যাবৎ পরিবেশন করা হয়। উষার কথায়, ‘‘সবাই জানেন, গরবা মণ্ডপগুলো লাভ জিহাদের বড় বড় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। তাই আমরা চাই, কেউ যাতে নিজের পরিচয় লুকিয়ে মণ্ডপে ঢুকতে না পারে। এটাকে পরামর্শও ভেবে নিতে পারেন, আসলে এটা সতর্কবার্তা।’’
উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা 'লাভ জিহাদ' শব্দটি প্রায়শই ব্যবহার করে থাকেন। এর মাধ্যমে দাবি করেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের ছেলেরা হিন্দু মহিলাদের নানারকমভাবে প্রভাবিত করে বিয়ে করে। যার ফলে হিন্দু মেয়েরা তাঁদের ধর্ম পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।
অথচ বিরোধীদের দাবি, দেশের মধ্যে ক্রমশ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগিয়ে, মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে হিন্দুভোট একত্রিত করতে চাইছে বিজেপি। এটা তারই একপ্রকার রণকৌশল। এইভাবে আগেও ভোটে বাজিমাত করেছে বিজেপি।
এখন প্রশ্ন উঠছে, কোনও মুসলিম ধর্মাবলম্বী যদি সচিত্র পরিচয়পত্র দেখান তাহলে কি তিনি গরবা প্যান্ডেলে প্রবেশাধিকার পাবেন? প্রসঙ্গত, এই ঘটনা প্রথম নয়। বিজেপি নেত্রীর এমন বিদ্বেষমূলক আচরণ এর আগেও প্রকাশ্যে এসেছে। ২০১৪ সালে গরবা প্যান্ডেলে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন তিনি। যার জেরে প্রবল বিতর্কের মুখে পড়তে হয় উষাকে।
শুধু তাই নয়, নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের গরবা উদ্যোক্তাদের তিনি চিঠি লিখে আর্জি জানিয়েছিলেন, গরবা প্যান্ডেলে যেন মুসলিমদের ঢুকতে না দেওয়া হয়। পাশাপাশি, মুসলিম সম্প্রদায়ের কোনও পুরুষ যাতে হিন্দু মহিলাদের সঙ্গে কথা বলতে না পারেন, তা নিশ্চিত করারও দাবি জানিয়েছিলেন তিনি।
মধ্যপ্রদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রীর আরও দাবি, প্রতি বছর গরবার সময় ৪ লক্ষেরও বেশি হিন্দু মহিলার ধর্ম পরিবর্তন করা হয়। যদিও এ ব্যাপারে কোনও সরকারি পরিসংখ্যান মেলেনি। তাই মন্ত্রী কোথা থেকে এই তথ্য পেলেন, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন