সাধারণ মানুষের টাকা ব্যাঙ্ক থেকে জালিয়াতি করেছে পুঁজিপতিরা। এক-দুই কোটি টাকা নয়, প্রতিদিন গড়ে ১০০ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক জালিয়াতি করেছে তারা। গত ৭ সাত বছর ধরে এই চক্রান্তের শিকার হয়ে আসছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI)।
২০২১-২২ অর্থবর্ষে দেশে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ, ৩৬৫ দিনের হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ব্যাঙ্ক জালিয়াতি হয়েছে ১১২.৩২ কোটি টাকা।
RBI-এর তথ্য অনুসারে, গত ৭ বছরে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির প্রায় অর্ধেক ঘটনাই ঘটেছে মহারাষ্ট্রে। তার পরে রয়েছে দিল্লি, তেলঙ্গানা, গুজরাট এবং তামিলনাড়ু। ২০১৫-র ১ এপ্রিল থেকে ২০২১-এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মোট আড়াই লক্ষ কোটি টাকা প্রতারণার শিকার হয়েছে। তার ৮৩ শতাংশই (টাকার অঙ্কে প্রায় ২ লক্ষ কোটি) ঘটেছে ওই পাঁচটি রাজ্যে।
RBI-এর রিপোর্টে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনাগুলিকে মোট ৮ টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-
১) তহবিলের অপব্যবহার এবং অপরাধমূলক বিশ্বাস লঙ্ঘন,
২) জাল নথিপত্রের মাধ্যমে জালিয়াতি,
৩) হিসাবের তথ্যে কারসাজি বা কাল্পনিক হিসাবের মাধ্যমে বেআইনি ভাবে সম্পত্তির রূপান্তর,
৪) নিয়ম ভেঙে ঋণের সুবিধা পাওয়া,
৫) অবহেলা এবং নগদ ঘাটতি,
৬) ব্যাঙ্ক জালিয়াতি,
৭) বিদেশি মুদ্রার লেনদেনে অনিয়ম,
৮) অন্য বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতি।
এবার দেখে নেওয়া যাক, ব্যাঙ্ক জালিয়াতির কিছু তথ্য-
২০২১-২২ সালের যে রিপোর্ট ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) প্রকাশ করেছে, তাতে জানা যাচ্ছে, ভারতের ইতিহাসে সবথেকে বড় জালিয়াতি হয়েছে গুজরাটে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে, জাহাজ নির্মাণ সংস্থা এ বি জি শিপইয়ার্ড (ABG Shipyard)-এর বিরুদ্ধে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অভিযোগ এনেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই (CBI)। বিপুল পরিমাণ এই অর্থ জালিয়াতি হয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI) থেকে। এটিকে ভারতের ইতিহাসে 'বৃহত্তম ব্যাঙ্কিং কেলেঙ্কারি' বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
এরপরেই রয়েছে, ব্যবসায়ী নীরব মোদী (Nirav Modi) এবং মেহুল চোকসি (Mehul Choksi)-র নাম। দু'জনে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (Punjab National Bank) থেকে ১৪ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতি করেছেন।
তবে, এ বি জি শিপইয়ার্ড-কে ছাপিয়ে রেকর্ড অঙ্কের ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে দেওয়ান হাউজিং ফাইন্যান্স লিমিটেড (DHFL)-এর বিরুদ্ধে। জালিয়াতির পরিমাণ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। ১৭টি ব্যাঙ্ক থেকে এই টাকা জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে DHFL-এর প্রাক্তন সিএমডি কপিল ওয়াধওয়ান, পরিচালক ধীরজ ওয়াধাওয়ানের বিরুদ্ধে। তাঁদের বিরুদ্ধে গত জুনে মামলা দায়ের করেছে সিবিআই। জানা যাচ্ছে, দেশে এটিই সবথেকে বড় ব্যাঙ্ক জালিয়াতি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন