বিগত ছয় বছরে ভারতীয় রেল গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি-র ৭২ হাজার পদ বাতিল করেছে। এই সময়ের মধ্যে জোনাল রেলের প্রায় ৮১ হাজার পদ বাতিল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে রেলওয়ে বোর্ডের তরফ থেকে। এই প্রস্তাব কার্যকরী হলে ভবিষ্যতে রেলের ১.৫ লাখ পদ আর পূরণ হবে না।
পদ বাতিল প্রসঙ্গে সরকারের যুক্তি যে পদগুলি বাতিল করা হচ্ছে সেইসুলির প্রয়োজনীয়তা বর্তমানে নেই। মূলত রেলের আধুনিকীকরণের জন্যই ঐ পদগুলি বাতিল করা হচ্ছে। তবে অনেকে মনে করছেন এই পদ বাতিলের ফলে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি-র অনেক দক্ষ কর্মী বাদ হয়ে যেতে পারেন। যা রেল পরিষেবার ধারাবাহিকতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাবে। এমনকি নিরাপদ ট্রেন চলাচলেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকবে।
রেলওয়ে বোর্ডের তথ্যে দেখা যাচ্ছে ২০১৫-১৬ থেকে ২০২০-২১ অর্থবর্ষের মধ্যে ১৬ টি জোনাল রেলওয়ে থেকে ৫৬,৮৮৮ টি পদ বাতিল করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৫,৪৯৫ টি পদ বাতিলের কথা রেল স্বীকার করে নিয়েছে। স্টেটসম্যান সূত্রের খবর, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে জোনাল রেলের জন্য বহু আধিকারিক থেকে শুরু করে কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। তা শেষ হলেই নতুন করে ১০ থেকে ১৫ হাজার পদ বাতিল হবে বলে জানিয়েছে রেল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রেলের যে ১৫ লক্ষ অনুমোদিত পদ ছিল এই পদক্ষেপের ফলে তা কমিয়ে ১২.৭৫ লাখে নিয়ে আসা হয়েছে। ঐসব পদ বাতিল করে প্রায় ৪.৫ লাখ চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগ করেছে রেল। রেলের এক আধিকারিক জানান, পদ বাতিলের প্রক্রিয়াটি মূলত কর্মীদের কাজের ওপর ভিত্তি করে করা হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তি আসাতে সেইসব পদ অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।
রেলের অনুমোদিত পোস্টগুলিও আউটসোর্সিং-এর ফলে কমে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা চলে রাজধানী, শতাব্দী এক্সপ্রেসগুলিতে বৈদ্যুতিক মেকানিক্যাল টেকনিশিয়ানদের পোস্টগুলি চুক্তিভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো রেলকর্মীদের বেতন ও পেনশনের জন্য রেল তার মোট আয়ের এক-তৃতীয়াংশ খরচ করে। উপার্জিত ১ টাকার মধ্যে রেল ৩৭ পয়সা খরচ করে শ্রমিকদের বেতন আর পেনশনের জন্য ১৬ পয়সা খরচ করে। ১৭ পয়সা খরচ হয় জ্বালানির জন্য। মূলত এইসব খরচ কম করার জন্য পদগুলিকে লুপ্ত করে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করছে ভারতীয় রেল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন