আইআরসিটিসি-র সাথে শেয়ার করা যাত্রীদের যাবতীয় গোপন তথ্য আর বেশিদিন ব্যক্তিগত নাও থাকতে পারে। এমন আশঙ্কাই প্রকাশ করলেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতীয় রেলের টিকিট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন (IRCTC) যাত্রীদের ব্যক্তিগত তথ্য ডিজিটাইজেশনের ক্ষেত্রে একজন পরামর্শদাতা নিয়োগ করতে চাইছে। যার জন্য একটি টেন্ডার জারি করেছে আইআরসিটিসি। টেন্ডারটি জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৯ আগস্ট, ২০২২।
সূত্রের খবর, গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করে প্রায় হাজার কোটি টাকা আয় করতে চাইছে আইআরসিটিসি। প্রতিবছর ভারতীয় রেল ৪ লক্ষেরও বেশি টিকিট বিক্রি করে। যাত্রীদের একটা বড় অংশের গোপনীয় তথ্য জমা থাকে রেলের কাছে। নিজেদের আয় বাড়ানোর জন্য এবার সেইসব তথ্যই ডিজিটাইজেশনের পরিকল্পনায় রয়েছে ভারতীয় রেল। এমনকি যাত্রীদের নাম, ঠিকানা, বয়স, ফোন নম্বর কোনও কিছুই গোপন থাকবে না বলে অভিযোগ উঠছে। শুধু তাই নয়, অনলাইনে ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টিকিট বুক করার সময় সেই সংক্রান্ত তথ্য সরাসরি চলে যায় আইআরসিটিসি-র পোর্টালে।
এর ফলে প্রশ্ন উঠছে, দেশে যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন এখনও তৈরী হয়নি, সেখানে হঠাৎ কেন ভারতীয় রেল এই পদক্ষেপ নিচ্ছে?
এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মত, প্রতিবছর দুর্গাপুজো ছাড়াও বেশ কয়েকবার বাইরে ঘুরতে যান যাত্রীরা। তাঁরা কোথায় যান, কতবার যান, থ্রি-টিয়ার না কি টু-টিয়ারের টিকিট কাটেন, তার সব তথ্যই জমা হতে থাকে আইআরসিটিসি-র পোর্টালে। প্রতিদিন প্রায় দু’কোটি মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করেন। তার মধ্যে প্রায় এক কোটি যাত্রী দূরপাল্লার ট্রেনে চড়েন। তাঁদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ লোকই টিকিট কাউন্টারে না গিয়ে অনলাইনে আইআরসিটিসি-র পোর্টালে টিকিট কাটেন। যার ফলে তাঁদের সব তথ্যই সরাসরি চলে যায় আইআরসিটিসি-র পোর্টালে।
এমনকি যারা রেলের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণ করেন এবং পার্সেল পাঠান তাঁদের তথ্যও জমা থাকছে রেলের কাছে। পর্যটন, পরিবহন, অর্থনীতির বিভিন্ন স্তরে যুক্ত থাকা ছোট বড় শিল্পপতিদের কাছে এইসব তথ্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে, রেলওয়ে সংস্থা যাত্রীদের ব্যক্তিগত তথ্য ডিজিটাইজেশনের কথা ঘোষণা করতেই দর বেড়েছে শেয়ার বাজারেও। এ প্রসঙ্গে তথ্য সুরক্ষার পক্ষে সওয়ালকারী সংস্থা 'ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন' জানিয়েছে, আইআরসিটিসি যে উপদেষ্টা সংস্থা নিয়োগ করবে, তারা যাত্রী, পণ্য পরিবহণের সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখবে কী ভাবে ও কাকে তা বেচা সম্ভব। নাম, ঠিকানা, বয়স, মোবাইল নম্বর, ই-মেল আইডি, টাকা দেওয়ার উপায়, লগ ইন আইডি, পাসওয়ার্ড থেকে কোন যাত্রী কত বার, কোথায়, কী ভাবে যাতায়াত করেন, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন