'শহিদদের অপমান': জালিয়ানওয়ালাবাগের নতুন রূপে ক্ষোভ ইয়েচুরি, ইরফান হাবিব সহ বিশিষ্টদের

দীর্ঘ সংস্কারের পর গত শনিবার নতুন করে সাজানো জালিয়ানওয়ালাবাগের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জালিয়ানওয়ালাবাগের নতুন রূপ নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে ঐতিহাসিক তথা রাজনৈতিক মহলে।
আগে যেমন ছিল (বাম) নতুন রূপে জালিয়ানওয়ালাবাগ (ডান)
আগে যেমন ছিল (বাম) নতুন রূপে জালিয়ানওয়ালাবাগ (ডান)ছবি - ট্যুইটারের সৌজন্যে
Published on

"আমাদের শহীদদের অপমান করা হয়েছে। জালিয়ানওয়ালা হত‍্যাকান্ডে নিহত হিন্দু-মুসলিম-শিখরা যাঁরা বৈশাখীর জন্য সেখানে একত্রিত হয়েছিলেন, তাঁরা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে শক্তিশালী করেছিলেন। এখানকার প্রতিটি ইট ব্রিটিশ শাসনের ভয়াবহতার কথা বলে। মহাকাব্যিক স্বাধীনতা সংগ্রাম আন্দোলনের সাথে যাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না তাঁরাই এইভাবে কলঙ্কিত করতে পারে সংগ্রামকে।" সংস্কারের পর জালিওয়ানবাগের আমূল পরিবর্তন নিয়ে এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।

দীর্ঘদিন ধরে চলা সংস্কারের পর গত শনিবার নতুন করে সাজানো জালিয়ানওয়ালা বাগের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জালিয়ানওয়ালা বাগের এই নতুন রূপ নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে ঐতিহাসিক তথা রাজনৈতিক মহলে।

এর আগে একাধিকবার সংস্কার হয়েছে জালিয়ানওয়ালা বাগ। কিন্তু যে পথ দিয়ে ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল জেনারেল ডায়ার ও তাঁর বাহিনী জালিওয়ানা বাগে ঢুকে নিরীহ মানুষদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল, দু'দিকে ইটের দেওয়াল দিয়ে ঘেরা সেই সরু গলির কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। এই গলির প্রতিটি ইট এখনও সেই ভয়ঙ্কর দিনের ঘটনা মনে করিয়ে দেয়।

কিন্তু এবার সেই গলিপথের আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে। দুই দেওয়াল ঝকঝকে মোজাইক করে তাতে একাধিক মূর্তি লাগানো হয়েছে। ইতিহাস অনুযায়ী ওই দিন গুলি থেকে প্রাণ বাঁচাতে অসংখ্য মানুষ কুয়োতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। সেই কুয়োও ভেঙে ফেলা হয়েছ। তার পরিবর্তে কাচের দেওয়াল ঢাকা নতুন কুয়ো তৈরি করা হয়েছে। মূল স্মারকে লেজার প্রযুক্তির সাহায্যে চোখধাঁধানো আলো লাগানো হয়েছে। সাউন্ড সিস্টেম চালু করা হয়েছে।

জালিওয়ানওয়ালা বাগের এই নতুন রূপ দেখে ক্ষুব্ধ ঐতিহাসিকরা। তাঁদের অভিযোগ, সৌন্দর্যায়ন করতে গিয়ে ইতিহাস মুছে ফেলা হচ্ছে। লেজার আলো সহযোগে নতুন জালিয়ানওয়ালা বাগের বিভিন্ন দৃশ্যের একটি ভিডিও নিজের ট‍্যুইটারে পোস্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই ভিডিও রিট‍্যুইট করে বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ইরফান হাবিব ট‍্যুইটে লিখেছেন, "এটাই স্মৃতিসৌধের বাণিজ্যিকীকরণ। যেখানে ঐতিহ‍্য মূল‍্য চলে গিয়ে আধুনিক কাঠামো তৈরি হয়। এই স্মারকগুলি যে সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে, সেই সময়ের চিহ্ন ধরে রেখে এগুলোর দেখাশোনা করা উচিত।"

ঐতিহাসিক কিম এ ওয়াগনার লেখেন, "১৯১৯ সালে অমৃতসর হত‍্যাকান্ডের স্থান, জালিয়ানওয়ালা বাগের পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে শুনে আমি স্তম্ভিত। এর অর্থ এই ঘটনার শেষ চিহ্নগুলো কার্যকরভাবে মুছে ফেলা হয়েছে।"

কংগ্রেসের তরফ থেকেও এই ঘটনার নিন্দা করা হয়েছে। কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈয়ের কথায়, এভাবে বিভিন্ন রঙের ডিস্কো আলো লাগানোয় জালিয়ানওয়ালাবাগের গুরুত্ব ও আতঙ্ক কমে গিয়ে তা বিনোদনের পর্যায়ে চলে গিয়েছে।

জালিয়ানওয়ালা বাগের শহিদদের পরিবারও ক্ষুব্ধ এই ঘটনায়। 'জালিয়ানওয়ালা বাগ ফ্রিডম ফাইটার্স ফাউন্ডেশন' ভবিষ্যতের সমস্ত সরকারি কর্মসূচি বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ঘটনায় সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফ থেকে এখনও কিছু বলা হয়নি।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in