প্রতিদিনই বসে যাচ্ছে জোশীমঠের জমি। ৫৬১-র বেশি বাড়িতে ধরেছে ফাটল। যে কোনও মুহূর্তে এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসী।
জানা যাচ্ছে, ভূমি ধসের আতঙ্কে শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে ৬০ টিরও বেশি পরিবার। প্রশাসনের পক্ষে থেকে ২৯টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকি ৫০০ টি পরিবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আতঙ্কে বসবাস করছে যোশীমঠে।
কিন্তু, কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল? কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে আসছে প্রায় ৫০ বছরের পুরনো একটি রিপোর্টের কথা। জানা যাচ্ছে, ১৯৭৬ সালে এমসি মিশ্রের সভাপতিত্বে একটি ১৮ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যে কমিটি সমীক্ষা রিপোর্টে স্পষ্ট করে বলা বলেছিল, প্রাকৃতিক ও মানুষের কর্মকাণ্ডের জেরে জোশীমঠের স্থায়িত্ব বড়জোর ১০০ বছর। এর মধ্যে শহরটি ধীরে ধীরে তলিয়ে যাবে। তাই, ধস রুখতে বোল্ডার না সরানো, বড় নির্মাণ না করা এবং প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষ রোপণের পরামর্শ দিয়েছিল মিশ্র কমিটি।
কিন্তু, প্রায় ৪৭ বছর আগের মিশ্র কমিটিরে সেই সতর্কবার্তা ও সুপারিশকে গুরুত্ব দেয়নি উত্তরাখণ্ড সরকার। ধাপ কেটে, সুড়ঙ্গ খুঁড়ে তৈরি করেছে রাস্তাঘাট। গড়ে তুলেছে নতুন জনবসতি। পর্যটকদের সুবিধার্থে বাণিজ্যিকভাবে ৫ থেকে ৭ তলা বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য জোশীমঠের পাহাড়ের নীচে টানেল এবং বিষ্ণুপ্রয়াগ বাইপাস খনন করা হচ্ছে। আর, এই অপরিকল্পিত উন্নয়নই ডেকে এনেছে বিপদ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছরে বেপরোয়া নির্মাণ, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, এবং জাতীয় সড়ক প্রসস্ত করার কাজে আরও চাপ বেড়েছে প্রকৃতির উপর। উন্নয়নের নেশায় মত্ত মানুষ খেয়ালই করেনি কখন প্রকৃতির সহ্যের বাঁধ ভেঙেছে!
রিপোর্ট বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে অন্তত ১২৮টি ধসের মুখে পড়েছে চামোলি-জোশীমঠ এলাকাটি। ২০২১ সালে উত্তরাখণ্ডের চামোলিতে কাদা-ধসের বন্যায় তলিয়ে গিয়ে প্রায় ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তখন থেকেই জোশীমঠের বাড়িগুলিতে বড় বড় ফাটল নজরে আসতে শুরু করে। কিন্তু, তারপরেও প্রশাসনের টনক নড়েনি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন