স্বামী বিবেকানন্দ ও তাঁর গুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় ইসকনের নয়াদিল্লি শাখার সহ-সভাপতি ধর্মগুরু অমোঘ লীলা দাসের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল সংগঠন। মঙ্গলবার ইসকনের পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কে এই অমোঘ লীলা দাস?
ধর্মগুরু হিসেবে পরিচিত হওয়ার আগে তাঁর প্রথম জীবন সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য প্রমাণ না পাওয়া গেলেও সমাজমাধ্যমে তাঁর বেশ কিছু সাক্ষাৎকার থেকে কয়েকটি তথ্য জানা যায়। বর্তমানে সনাতন ধর্ম সম্পর্কে তাঁর বহু প্রবচন সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশ ভাইরাল। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না যে, এই ধর্মগুরুর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রিও রয়েছে। উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের একটি ধার্মিক পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। ২০০০ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়েই তিনি ঈশ্বরের খোঁজে ঘর ছাড়েন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরে গিয়ে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে ডিগ্রি অর্জন করেন। এমনকি ২০০৪ সালে স্নাতক ডিগ্রির শেষে একটি মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিতে প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজও শুরু করেন। কিন্তু ২০১০ সালে ২৯ বছর বয়সে শেষমেশ কর্পোরেট দুনিয়া ছেড়ে অমোঘ লিলা দাস পুরোপুরি কৃষ্ণের ভক্ত হয়ে ইসকনে যোগ দেন।
মঙ্গলবার এই অমোঘ লীলা দাসের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল ইসকন। উল্লেখ্য, সংগঠনের পক্ষ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার আগে অমোঘ দাস এই সংগঠনের নয়াদিল্লি শাখার সহ-সভাপতি পদে ছিলেন। সমাজমাধ্যমে সনাতন ধর্ম নিয়ে তাঁর কথা যথেষ্ট জনপ্রিয়। কিন্তু ঠিক কী কারণে তাঁকে এমন কঠিন সাজা দিল ইসকন? সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অমোঘ লীলা দাস স্বামী বিবেকানন্দের মাছ খাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “একজন ধার্মিক মানুষ কখনই এমন কিছু খেতে পারেন না যাতে কোনও প্রাণীর ক্ষতি হয়। একজন সত্যিকারের ধার্মিক মানুষ কখনও মাছ খেতে পারেন না। পারেন কি? কারণ, ওরাও তো প্রাণী। ওরাও তো কষ্ট পায়।” এই বিষয়ে তিনি উপস্থিত বিশাল ভক্তদের সামনে স্বামী বিবেকানন্দ ও তাঁর গুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের নাম উল্লেখ করে এই মন্তব্য করেন।
মঙ্গলবার জারি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইসকন জানায়, “অমোঘ লীলা দাস যে মন্তব্য করেছেন তা ‘অগ্রহণযোগ্য’ ও ‘অসঙ্গত’। আমাদের দেশের দুই মহান ব্যক্তির শিক্ষা সম্পর্কে তিনি ভুল ধারণা পোষণ করেন।” বিশ্বব্যাপী সনাতন ধর্মের প্রবর্তক ওই সংস্থা আরও জানিয়েছে, “অমোঘ লীলা দাস প্রভু তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছেন এবং সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে তিনি আগামী একমাসের জন্য সমস্তরকমের সমাজমাধ্যম থেকে দূরে থাকবেন।”
এই ভুলের জন্য ওই ধর্মগুরুর উপর একমাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইসকন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন