সুপ্রিম কোর্টে ৩৭০ ধারার অবলুপ্তির বিরুদ্ধে কথা বলার পরেই কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের এক অধ্যাপককে বরখাস্ত করল সেখানকার শিক্ষা দফতর। এই ঘটনা শীর্ষ আদালতের নজরে আনতেই সোমবার মুখ খুললেন প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড়। অ্যাটর্নি জেলারেল আর ভেঙ্কটরামানিকে জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিল আদালত। ঘটনাটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনের ‘প্রতিশোধমূলক সিদ্ধান্ত’ কি না, সে বিষয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহের বুধবার দুদিনের ছুটি নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের বর্ষীয়ান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক তথা আইনজীবী জাহুর আহমেদ ভাট সুপ্রিম কোর্টে হাজির হন। প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড়-সহ মোট পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের সামনে দেশের ভূস্বর্গ রাজ্য কাশ্মীরে ৩৭০ ধারার বিলুপ্তি নিয়ে কথা বলেন তিনি। কিন্তু ছুটির শেষে শুক্রবার তিনি জম্মু ও কাশ্মীরে ফিরে নিজের কাজে যোগ দিলেই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।
জম্মু ও কাশ্মীর শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়, "জম্মু ও কাশ্মীরের সরকারী কর্মচারীদের নিয়মবিধি, বেসামরিক চাকরির নিয়মবিধি লঙ্ঘন করার জন্য অধ্যাপক ভাটকে অবিলম্বে বরখাস্ত করা হচ্ছে।” পাশাপাশি, বরখাস্ত থাকাকালীনও তাঁকে জম্মু ও কাশ্মীরের শিক্ষা দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার এই ঘটনা আদালতের নজরে আনেন বর্ষীয়ান আইনজীবী কপিল সিব্বল। তিনি জানান, “যে অধ্যাপক শীর্ষ আদালতে এসে কয়েক মিনিটের বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁকে গত ২৫ আগস্ট বরখাস্ত করে দেওয়া হয়েছে। ২ দিনের জন্য ছুটি নিয়েছিলেন তিনি এবং ছুটির শেষে নিজের কাজে ফিরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বরখাস্ত করে দেওয়া হয়।”
এরপরেই অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানির উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দেন, “বিষয়টি ঠিক কী হয়েছে খতিয়ে দেখুন। এই আদালতে আসার পরেই একজনকে তাঁর চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেওয়া হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে কথা বলুন।”
এই প্রসঙ্গে ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড় আরও জানান, “যদি অন্য কোনও কারণ থাকে, তাহলে আলাদা। কিন্তু এই আদালতে হাজির হওয়ার জন্য বরখাস্ত কেন হতে হবে?” কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা ওই অধ্যাপকের বরখাস্তের কারণ হিসেবে অন্য বিষয়ের ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করলেও বিচারপতি এসকে কৌল সময়ের কাকতালীয়তার বিষয়টি উত্থাপন করলেই তা মেনে নিতে বাধ্য হন মেহতা।
অন্যদিকে, বিচারপতি বিআর গভাইয়ের পর্যবেক্ষণ, “এত স্বাধীনতার তাহলে কী মানে যদি আদালতে হাজির হলেই বরখাস্ত হতে হয়! যদি এখানে উপস্থিত হওয়ার জন্যই ওই অধ্যাপককে তাঁর চাকরি থেকে বরখাস্ত হতে হয়, তাহলে এটা নিঃসন্দেহে সরকারের প্রতিশোধমূলক আচরণ।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন