২০২৩ সালের বাজেট অধিবেশনের সময়, দিল্লির রাজপথে বৃহত্তর সমাবেশের ডাক দিয়েছে দেশের শ্রমিক, কৃষক ও খেতমজুরদের একাধিক সংগঠন।
সূত্রের খবর, সংসদে আগামী বাজেট অধিবেশনের সময় এই সমাবেশ হবে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে বৃহত্তম শ্রমিক-কৃষক সমাবেশ। এই সমাবেশ সফল করতে আগামী অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত (প্রায় চার মাস) দেশজুড়ে ব্যাপক প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনগুলি।
গত সোমবার, দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে জাতীয় স্তরের যৌথ কনভেনশনের ডাক দেয় CITU, AIKS এবং AIAWU। এই কনভেনশনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ‘এখনও যে সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়নি, তাঁদের প্রত্যেকের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য’ নিয়েই যৌথভাবে প্রচার চালানো হবে।
এদিনের কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন CITU-র সভাপতি কে হেমলতা ও সাধারণ সম্পাদক তপন সেন, AIKS-র সভাপতি অশোক ধাওয়াল ও সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা, এবং AIAWU-র সভাপতি এ বিজয়রাঘবন ও সাধারণ সম্পাদক বি ভেঙ্কট।
এছাড়াও কনভেনশনের যৌথ কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন দেবাশিস বসু (BEFI), অভিমন্যু (BSNLEU), পরাশর (CCGEW), শ্রীকুমার (AISGEF), ভাটনগর (AIIEA) সহ বিভিন্ন ফেডারেশন ও সংগঠনের নেতৃত্ব।
এদিন কনভেনশন শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে হান্নান মোল্লা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ জানান, জীবনজীবিকা ও কাজের পরিবেশের আশু দাবিগুলিই শুধু নয়, আজকের সংগ্রাম BJP-RSS জমানার সাম্প্রদায়িক ও স্বৈরাচারী আক্রমণ থেকে দেশের অর্থনীতি এবং আমাদের সমাজের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক কাঠামোটিকে রক্ষার জন্যও। তাই BJP-RSS-এর উদারনৈতিক, সাম্প্রদায়িক ও স্বৈরাচারী শাসনকে পর্যুদস্ত করার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে দেশের সমস্ত শ্রমিক, কৃষক এবং খেতমজুরদের।
বিবৃতিতে বলা হয়, আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ২০২৩ সালে সংসদের বাজেট অধিবেশনের সময় দিল্লিতে হবে দ্বিতীয় ‘মজদুর-কিষাণ সংঘর্ষ সমাবেশ’।
কী কী দাবি নিয়ে যৌথ আন্দোলনে নামছে CITU, AIKS এবং AIAWU ?
প্রতি মাসে সব শ্রমিকের ২৬ হাজার টাকা করে ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করতে হবে।
সি২+৫০% নীতি মেনে সব কৃষকের সব ফসলের MSP দিতে হবে।
উৎপাদিত সব ফসলের সরকারি সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হবে।
চার শ্রম কোড বাতিল করতে হবে।
বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল, ২০২০ বাতিল করতে হবে।
MGNREGA-য় ২০০দিনের কাজ এবং দৈনিক ৬০০টাকা মজুরি নিশ্চিত করতে হবে।
শহর এলাকায় কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন চাই।
গরিব ও মধ্য কৃষক এবং খেতমজুরদের সব ঋণ এককালীন মকুব করতে হবে।
৬০ বছরের বেশি বয়সীদের সকলকে পেনশন দিতে হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণ বন্ধ করতে হবে।
ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপলাইন (NMP) এবং অগ্নিপথ প্রকল্প খারিজ করতে হবে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
গণবন্টন ব্যবস্থা জোরদার ও সর্বজনীন করতে হবে। ১৪ টি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য রেশনের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হবে।
ট্যাক্সের আওতায় পড়েনা এমন সব পরিবারের খাদ্য ও আয় নিশ্চিত করতে হবে।
খাদ্য ও নিত্য-পণ্যের ওপর থেকে জিএসটি (GST) প্রত্যাহার করতে হবে।
কেন্দ্রীয় কর কমিয়ে পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, রান্নার গ্যাসের দাম কমাতে হবে।
অরণ্য অধিকার আইন (FRA) কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
বাসিন্দাদের না জানিয়ে বনাঞ্চল ধ্বংসের অনুমতি দেওয়ার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি বন (সংরক্ষণ) আইনের যাবতীয় সংশোধনী ও বিধি প্রত্যাহার করতে হবে।
প্রান্তিক অংশের মানুষের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন বন্ধ করে সামাজিক ন্যায় নিশ্চিত করতে হবে।
সকলের জন্য উচ্চমানের এবং সর্বজনীন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করতে হবে।
সকলের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
অতি-ধনী ও কর্পোরেটের ওপর কর বাড়িয়ে এবং সম্পদ কর চালু করে সব শ্রমিককে মাসে ১০ হাজার টাকা করে পেনশন দিতে হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন