উত্তরাখণ্ডের শহর যোশীমঠ (Joshimath)-কে 'ভূমিধস প্রবণ অঞ্চল' হিসাবে ঘোষণা করেছে প্রশাসন। সোমবার, চামোলি জেলা শাসক হিমাংশু খুরানা জানিয়েছেন, ‘যোশীমঠকে যোশীমঠকে ‘ভূমিধস প্রবণ অঞ্চল’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে শীঘ্রই সেখানে দুটি কেন্দ্রীয় দল পৌঁছাবে।’
তিনি আরও জানান, 'জল শক্তি মন্ত্রকের একটি দল সহ কেন্দ্রীয় সরকারের দুটি দল এখানে আসছে। যোশীমঠ এবং সংলগ্ন এলাকায় নির্মাণ কাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শুকনো রেশন দ্রব্য প্রদান করা হচ্ছে।'
যোশীমঠে ফাটল এবং ভূমি ধসের কারণে ইতিমধ্যে ৬০৩ টি বাড়ি খালি করে দিয়েছে প্রশাসন। তার মধ্যে ৬৮ টি পরিবারকে ঠাঁই দেয়া হয়েছে অস্থায়ী শিবিরে।
শহরকে বাঁচানোর জন্য সকলকে একজোট হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে তিনি বলেন, 'সবাইকে জোট বেঁধে কাজ করার জন্য এবং যোশীমঠকে বাঁচানোর জন্য আবেদন করেছি। ৬৮ টি পরিবারকে অস্থায়ী শিবিরে পাঠানো হয়েছে। আরও ৬০০ টির বেশি পরিবারকে অন্যত্র সরানোর চেষ্টা চলছে। প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।'
জানা যাচ্ছে, যোশীমঠ শহরের জনসংখ্যা ১৭ হাজারের অধিক। বাড়িঘর এবং রাস্তায় ফাটল দেখা দেওয়ার পরে পুরো শহর জুড়েই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তবে, জরুরি পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনকে দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
এদিকে, উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতির জন্য জলবিদ্যুৎ প্রকল্পসহ অপরিকল্পিত অবকাঠামোগত উন্নয়নকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমির বিজ্ঞানী ডিএম ব্যানার্জি বলেন, 'যোশীমঠের এই পরিস্থিতির উপর নিকটবর্তী জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য রাস্তা এবং টানেল তৈরির প্রভাব পড়েছে।'
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে তিনি বলেন, 'হিমালয়ের একটি ছোট অংশ হল যোশীমঠ। এই অঞ্চলের শিলাগুলি প্রিক্যামব্রিয়ান যুগের এবং অঞ্চলটি সিসমিক জোন-৪-এ অবস্থিত। তাই, এখানকার জমিতে উঁচু বাড়ি, বিশেষ করে ৩-৪ তলা বাড়ি করা উচিত হয়নি।'
অনেকেই ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশনের (এনটিপিসি) জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, এনটিপিসি প্রকল্পের টানেলে বিস্ফোরণের প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে গত মাসে (ডিসেম্বরে) মুখ্যমন্ত্রীকে তিনবার চিঠি লিখেছিলেন তাঁরা।
ঠাকুর সিং রানা নামে এক হোটেল মালিক জানান, 'গত বছর ডিসেম্বরে, যখন প্রথম আমাদের বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়, তখনই আমরা সরকারকে বেশ কয়েকটি চিঠি লিখেছিলাম। কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। জেলাশাসক একবার এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন আমরা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি যে, যে কোনো সময় ডুবে যেতে পারে যোশীমঠ।'
জেলা শাসক স্বীকার করেছেন, তাকে এবং মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু, সেসময় তিনি জানতেন না, তাঁর কি করা উচিত!
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন