বিজেপি শাসিত কর্ণাটক রাজ্যে এবার হুমকির মুখে পড়লেন কর্ণাটক হাইকোর্টের বিচারপতি। এ বিষয়ে তীব্র নিন্দায় সরব হলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
মঙ্গলবার, কর্ণাটকে দুর্নীতি দমন শাখার (ACB) বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় মন্তব্য করার জন্য হুমকি পেয়েছেন খোদ হাইকোর্টের বিচারক। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী নিজস্ব ট্যুইটে জানিয়েছেন, "প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বিজেপির বুলডোজারে পিষ্ট, আমাদের প্রত্যেককে ভয়হীনভাবে কর্তব্য পালনে রুখে দাঁড়াতে হবে।"
কর্ণাটকের হাইকোর্টের বিচারপতি এইচ পি সন্দেশ অভিযোগ জানিয়েছেন যে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন রকমের হুমকি পাচ্ছিলেন। এমনকি তাঁকে বদলি করে দেওয়ার ব্যাপারেও পরোক্ষভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তারই এক ভিডিও ক্লিপিং প্রকাশ্যে এনেছেন রাহুল গান্ধী। এ প্রসঙ্গে রাহুল ট্যুইটারে লিখেছেন - "ডারো মত"।
সোমবার হাইকোর্টের বিচারক দুর্নীতি দমন শাখাকে "সংগ্রহ কেন্দ্র" বলার জন্য বদলির হুমকি পেয়েছেন বলে অভিযোগ। সেই দিনই তিনি বেঙ্গালুরুর প্রাক্তন ডেপুটি কমিশনার এবং দুর্নীতি দমন শাখার এডিজিপি সীমান্ত কুমার সিংকে 'কলঙ্কিত অফিসার' বলেও উল্লেখ করেছিলেন। এর পাশাপাশি কর্ণাটকের বিজেপি সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন বিচারপতি এইচ পি সন্দেশ।
তবে বিচারপতি সন্দেশ স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, যতই চাপ আসুক তিনি মাথানত করবেন না। বিচারব্যবস্থার মর্যাদা রক্ষায় তিনি সর্বদা বদ্ধপরিকর থাকবেন। তিনি রাজ্যজুড়ে চলা দুর্নীতিকে ক্যান্সারের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
জমি বিরোধ সংক্রান্ত একটি বিষয়ে ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে পি এস মহেশ নামের একজন ডেপুটি তশিলদার কর্ণাটক হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিল। বিচারক সন্দেশ এই মামলার শুনানি করছিলেন। তবে হুমকির বিষয়ে বিচারপতি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, "আমি এসবে ভয় পাই না। বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে আমি প্রস্তুত। নিজের পদ চলে গেলেও আমি ভয় পাই না। বিচারপতি হওয়ার পরে নিজের সম্পত্তি বাড়ানোর চেষ্টা করিনি। আমি কৃষকের সন্তান। আমি কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নই। কোনও রাজনৈতিক আদর্শের ভক্ত নই।"
ঘুষ নেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন ওই ডেপুটি কমিশনার। তাঁর জামিনের আবেদনের শুনানি চলাকালীন বিচারপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, এক সহকর্মীর থেকে তিনি জেনেছেন, এর আগে দুর্নীতি সংক্রান্ত এমনই এক মামলায় তাঁকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে বিচারপতি সন্দেশ জানিয়েছেন, "বিচারব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখা আমার কর্তব্য। একমাত্র সংবিধানের প্রতিই আমি দায়বদ্ধ। দেখতে চাই, সংবিধান নাকি উত্তর ভারতের ওই আইপিএস— কে বেশি ক্ষমতাবান।"
বিচারপতির ক্ষোভ প্রকাশের পরেই ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে বেঙ্গালুরু সিটি ডেপুটি কমিশনার মঞ্জুনাথ জে-কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে সাসপেন্ড করেছে কর্ণাটক সরকার। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ৭ জুলাই।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন