চকলেট ও আপেলে মাদক মিশিয়ে নাবালিকাদের খাওয়াতেন। তারপর 'অপকর্মে' মাততেন লিঙ্গায়েত ধর্মগুরু শিবমূর্তি মুরুগা শারনারু (Shivamurthy Murugha Sharanaru)। সোমবার, এমনই দাবি করেছে কর্ণাটক পুলিশ।
দীর্ঘদিন ধরে দুই নাবালিকা ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে সম্প্রতি গ্রেপ্তার হন কর্ণাটকের মুপ্রধান আচার্য শিবমূর্তি মুরুগা শারনারু। গত ১ সেপ্টেম্বর, যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা (POSCO) আইনে তাঁকে গ্রেপ্তার করে কর্ণাটক পুলিশ। বর্তমানে তিনি বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন।
পুলিশের দাবি, বিশেষ আশীর্বাদ দেওয়ার আড়ালে প্রতিদিন নিজের পছন্দের একটি করে নাবালিকাকে তাঁর ব্যক্তিগত ঘরে পাঠানোর নির্দেশ দিতেন ধৃত ‘ধর্মগুরু’। শুধু তাই নয়, একটি নির্দিষ্ট দিনে কোন নাবালিকাকে তাঁর কাছে পাঠানো হবে- সেজন্য একটি রুটিনও ঠিক করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
তারপর, নাবালিকাদের তাঁর ব্যক্তিগত কক্ষে পাঠানো হলে, সেখানে তাদেরকে চকোলেট বা আপেলে মাদক মিশিয়ে খেতে দিতেন অভিযুক্ত ধর্মগুরু। পুলিশ জানিয়েছে, নাবালিকারা জ্ঞান হারানোর পর সারারাত তাঁদের ব্যক্তিগত কক্ষে আটকে রাখতেন শিবমূর্তি মুরুগা শারনারু। আর, নাবালিকাদের জ্ঞান ফেরার পর, তাঁদের ভয় দেখাতেন তিনি।
এমনকি, ঘটনার কথা জানালে তাদের (নাবালিকাদের) পরিবারকে শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিতেন- লিঙ্গায়েত এই 'ধর্মগুরু'। ফলে, ভুক্তভোগীরা এখন আতঙ্কে আছেন।
একইসঙ্গে, পুলিশ জানিয়েছে- নিজের অপকর্ম ঢাকতে একটি পন্থা নিয়েছিলেন ধৃত ‘ধর্মগুরু’। সকলে যাতে তাঁকে 'ভগবান' হিসাবে মানেন সেজন্য তিনি- অনেক যৌন নিপীড়িত মহিলাদের মঠে (আশ্রমে) থাকার জায়গা দিতেন। তাঁদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করতেন।
বাস্তবে, ঘটেছেও তাই। অনেকে মানুষই নিজেদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে দুবার ভাবেননি। তারা নিজেদের শিশুদের (নাবালিকাদের)ও বলতেন- 'ভগবান' নিজে থেকেই তাঁদের (নাবালিকা)-দের যত্ন নিচ্ছেন। এর ফলে, অনেক ভুক্তভোগীই মুখ খুলতে আরও বেশি দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছে।
সোমবার, আদালতে পুলিশ যে দুটি চার্জশিট জমা দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে- এই ক্ষেত্রে দুর্বল শ্রেণীর পরিবারকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এতিম (বাবা-মা হারা) বা একক পরিবারের কন্যাদের পছন্দ করা হয়েছে। যারা 'ধর্মগুরুর' কক্ষে যেতে অস্বীকার করতো, তাঁদেরকে আটকে রাখার পাশাপাশি ক্ষুধার্ত রাখা হত এবং কঠোর শাস্তি দেওয়া হত।
জানা যাচ্ছে, এই মামলায় অপর অভিযুক্ত মঠের পুরোহিত বাসবাদিত্য, মঠ-এর সেক্রেটারি পরমশিবাইয়া এবং অ্যাডভোকেট গঙ্গাধরাইয়া, এখনও পলাতক।
গত ৩১ আগস্ট শিবমূর্তি শরণারুর বিরুদ্ধে এসসি/এসটি আইন এবং পকসো আইনে মামলা দায়ের করা হয়। জানা গেছে দুই নাবালিকার একজন দলিত শ্রেণিভুক্ত। মহীশূরভিত্তিক এনজিও ওডানাডি সেবা সংস্থার কাছে দুই নাবালিকা ছাত্রী অভিযোগ জানানোর পর এই মামলা হয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন