কর্ণাটকের ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকার কর্ণাটক বিধানসভায় 'ধর্মান্তর বিরোধী' বিল পেশ করার আগে গীর্জা এবং খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর ওপর তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি বিতর্কিত এবং বৃহৎ মাপের প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷ কর্ণাটকের গোয়েন্দা বিভাগ গত ১৬ অক্টোবর কর্ণাটকের "অনুমোদিত এবং অননুমোদিত" গীর্জাগুলির তথ্য সংগ্রহের জন্য শীর্ষ পুলিশ এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের একটি আদেশ জারি করে। একথা জানিয়েছে দ্য কুইন্ট। দ্য কুইন্ট খবরে আরও জানায়, পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কল্যাণ সংক্রান্ত আইন কমিটি ঘোষণা করার পরই রাজ্যের গোয়েন্দা শাখা তৎপর হয়ে উঠেছিলো।
গত ২৯শে সেপ্টেম্বর কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই বলেন যে, রাজ্য সরকার রাজ্যে ক্রমবর্ধমান ধর্মান্তর রোধে বিধানসভায় একটি আইন আনার কথা ভাবছে। এই ঘোষণার পরেই রাজ্যের সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়৷ রিপোর্ট এবং তথ্য অনুসারে ধর্মান্তর বিরোধী আইন প্রবর্তনের সঙ্গে সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন বেড়ে যাবার সম্পর্ক আছে।
যদিও রাজ্যের সংখ্যালঘু কল্যাণ বিভাগ রাজ্যের গীর্জাগুলি সম্পর্কে এই পুরো সমীক্ষাকেই ‘স্বাভাবিক’ এবং ‘সহজ’ বলে দাবি করেছে কিন্তু মূল ঘটনা তার সম্পূর্ণ বিপরীত বলেই অনুমান করছে বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠন। এমনকি তথাকথিত সমীক্ষাকে খ্রিস্টান সংগঠনগুলি "বিপজ্জনক" বলে জানিয়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন খ্রিস্টান সংগঠনের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে।
আদেশ অনুসারে, 'সবচেয়ে গোপনীয়' হিসাবে নজরদারির অধীনে রয়েছে গির্জা এবং প্রার্থনা হল। যা গির্জা এবং সরকারী সম্পত্তির পাশাপাশি ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর গড়ে উঠেছে। তাদের ধর্মীয় প্রধানরাও নজরদারির অধীন। উদাহরণস্বরূপ, গির্জা বা সরকারী সম্পত্তির উপর নির্মিত চার্চের ক্ষেত্রে, গির্জার প্রধানের বিবরণ সংগ্রহ করতে হবে, যেখানে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষেত্রে, মালিকের বিবরণ সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়াও গির্জা প্রোটেস্ট্যান্ট বা ক্যাথলিক কিনা সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করার জন্যও পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে দ্য কুইন্ট তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে।
আদেশ অনুসারে, গীর্জা এবং গির্জার প্রধানদের সম্পর্কিত তথ্য ১৮ অক্টোবরের মধ্যে রাজ্যের গোয়েন্দা শাখায় পাঠানোর কথা ছিলো, যা সম্ভবত সম্পন্ন হয়েছে।
কর্ণাটকের জনসংখ্যার মাত্র ১.৮৭% খ্রিস্টান। এই সমীক্ষা বা নজরদারি, প্রস্তাবিত ধর্মান্তরকরণ বিরোধী আইনের সঙ্গে, রাজ্যে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত সহিংসতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। বেঙ্গালুরুর আর্চবিশপ জানিয়েছেন যে, তিনি আশঙ্কা করছেন এই আইন পাস হলে তা "বড় আকারের অনিয়ন্ত্রিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পথ তৈরি করবে।”
তার এই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দক্ষিণপন্থী হিন্দু সংগঠন। যেমন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, এই আইনের দাবিতে রাজ্যে বিক্ষোভ করছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৫ অনুসারে কোনো ব্যক্তির ধর্মের "প্রচার, অনুশীলন এবং দাবি" করার অধিকার নিশ্চিত করে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন