আরও এক কাশ্মীরি পণ্ডিতের হত্যার জেরে ক্ষোভের উত্তাপ উপত্যকায়। এই ঘটনার পর শুক্রবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতা। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বক্তব্য, কর্মসংস্থানের নাম করে তাদের আসলে বদলি করা হচ্ছে মেরে ফেলার জন্য। পরিযায়ী শ্রেণীর মানুষ বানিয়ে তাদের বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাশ্মীরের বুদগাম জেলার চাদোরার তেহসিল অফিসে কর্মরত রাহুল ভাট নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে খুন করে উগ্রপন্থীরা। অফিস চত্বরেই রাহুলকে গুলি করে পালায় তারা। এরপর রাহুলের খুনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তাঁর দেহ দাহ করা হয় বান তালাব শ্মশানে। দাহ করার সময় উপস্থিত জনতা পাকিস্তান-বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন।
এই ঘটনার জেরে কাশ্মীরি পণ্ডিতরা বুদ্গাম হাইওয়ে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। তাঁদের রক্ষা করতে প্রশাসন ব্যর্থ এই অভিযোগ তুলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন কাশ্মীরি পণ্ডিতরা। কিন্তু পুলিশ সেই বিক্ষোভ তুলতে এসে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোঁড়ে।
আরও জানা গেছে, পুলিশ-প্রশাসন এসে বিক্ষোভকারী পণ্ডিতদের বিক্ষোভ থামাতে বললে তাঁরা জানান, যতক্ষণ না উপরাজ্যপাল এসে দেখা করছেন তাঁরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় বিক্ষোভকারীদের।
এক বিক্ষোভকারী অভিযোগ করেন, "পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে আমাদের উপর। আর প্রশাসন বার বার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে বলে আউড়ে যাচ্ছে। এটাই কী স্বাভাবিক জীবন? ওঁরা আমাদের জম্মুতে সরিয়ে নিয়ে যাক। আর তারপর এই নিরাপত্তা ইস্যুকে ঠিক করুক।"
বিক্ষোভ তুলতে পুলিশের ভূমিকাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, "কাশ্মীরের জনগণের জন্য এটি নতুন কোনও ঘটনা নয়। প্রশাসন যখন হাতুড়ির মতো হয়, তখন প্রতিটি সমস্যাই পেরেকের মতো হয়। যদি লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সরকার কাশ্মীরি পণ্ডিতদের রক্ষা করতে না পারে তবে তাঁদের প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে।"
উল্লেখ্য, শুক্রবার একটি টুইটে মুফতি লিখেছেন, "কাশ্মীরি পণ্ডিতদের পাশে দাঁড়াতে এবং কেন্দ্রের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বুদগাম যেতে চেয়েছিলাম। আমাদের গৃহবন্দি করা হয়েছে, কারণ কাশ্মীরি মুসলমান এবং পণ্ডিতরা একে অপরের যন্ত্রণার প্রতি সহানুভূতিশীল। তাঁদের পৈশাচিক সাম্প্রদায়িক ভাবনার সঙ্গে এই ভাবনা খাপ খায় না।"
এই ঘটনার ফলে জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি সভাপতি রবিন্দর রায়নাকে চরম হেনস্তা করে কাশ্মীরি পন্ডিতরা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী কবিন্দর গুপ্তা। তাদের ঘেরাও করে ক্ষুব্ধ কাশ্মীরি পণ্ডিতরা বলেন, "আপনারা আমাদের নিয়ে যাচ্ছেন শুধু প্রাণ মারতে। আমাদের তরুণরা রোজ খুন হচ্ছে, এতদিন আপনারা কী করেছেন?"
সেখানে আরও একজন বিক্ষুব্ধ চেঁচিয়ে বলেন, "আপনারা আমাদের বলির পাঁঠা বানিয়ে দিয়েছেন। আমাদের জন্য কোনও সুরক্ষা নেই এখানে। সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। আমরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছি এই দিন দেখতে?"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন