স্বাস্থ্য সচেতনার দিক থেকে ফের অনন্য নজির গড়ল বাম শাসিত কেরল। এক লক্ষ মহিলার হাতে বিনামূল্যে তুলে দেওয়া হল 'মেনস্ট্রুয়াল কাপ'। ঋতুচক্র একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েদের এই ঋতুচক্রের বিষয়টিকে ছুঁঁতমার্গ হিসেবে দেখা হয়। ঠিক সেই জায়গা থেকেই রাজ্যের মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করার লক্ষ্যে আরও একধাপ এগিয়ে গেল কেরল।
রাজ্যের মহিলাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবে কেরল সরকারের অভিনব প্রয়াস, যার নাম দেওয়া হয়েছে 'কাপ অফ লাইফ'। এর্ণাকুলামের সাংসদ হিবি ইডেনের উদ্যোগে তাঁর এলাকার প্রায় ১ লক্ষ মহিলার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে 'মেনস্ট্রুয়াল কাপ'। ঋতুচক্র চলাকালীন লজ্জা এবং ছুঁতমার্গ দূর করাই এই প্রচারের একমাত্র লক্ষ্য। এছাড়াও সেই সময়কালে 'মেন্সট্রুয়াল কাপ' ব্যবহারের সুবিধা বোঝাতেই এই নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রতিমাসেই ঋতুচক্র চলাকালীন যথেষ্ট অস্বস্তিতে কাটে প্রতিটি মেয়ের। পেশিতে ব্যথা, পেটে ব্যথা, গা গোলানো, বমি বমি ভাব, খাদ্যে অনীহা, মন মেজাজের পরিবর্তনের সাথে ক্রমাগত রক্তপাত চলতে থাকেই। যার জন্য এই সময় চিকিৎসকরা বাড়তি যত্ন নিতে বলেন শরীরের প্রতি। এই সময় ছুঁতমার্গ নিয়ে চললে তার যথেষ্ট প্রভাব পড়ে শরীরে।
চিকিৎসকদের মতে, 'মেন্সট্রুয়াল কাপ' ব্যবহার করলে বারবার স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলাবার প্রয়োজন হয় না। র্যাশ এবং অন্যান্য সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কম থাকে। এছাড়া এই কাপ পরিবেশ বান্ধবও। বরং সেই তুলনায় স্যানিটারি ন্যাপকিন পরিবেশের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর।
২০২১ সালের একটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, দেশে ব্যবহৃত বর্জ্য পদার্থের মোট পরিমাণের একটা বড় অংশই হল ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিন। যা একবারের বেশি ব্যবহার করা যায় না। অন্যদিকে 'মেন্সট্রুয়াল কাপ' পুনর্ব্যবহার যোগ্য। এক্ষেত্রে সংক্রমণ এড়াতে প্রতিবার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কাপটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া প্রয়োজন। এর পাশাপাশি কাপটি ব্যবহার করার জন্য সঠিক পদ্ধতি শিখে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এর ফলে স্বাস্থ্যবিধিও বজায় থাকবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গ্রাম বা মফস্বলের বহু অঞ্চলেই মহিলারা ন্যাপকিন ব্যবহার না করে কাপড় ব্যবহার করেন। এর ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে পুরোমাত্রায়। তাই তাঁদের ন্যাপকিন ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হয়। বহু জায়গাতেই বিনামূল্যে ন্যাপকিন সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হয়। কিন্তু কেরল এবার স্যানিটারি ন্যাপকিনকেও বিদায় জানিয়ে হাঁটছে মেন্সট্রুয়াল কাপের দিকে।
এই কাপ কি ন্যাপকিনের থেকেও বেশি নিরাপদ? তেমনই দাবি বিশেষজ্ঞদের। যেহেতু এই কাপ ঋতুস্রাবের রক্তকে না শুষে কেবল সংগ্রহ করে রাখে তাই এটি অনেক বেশি নিরাপত্তা দেয়। অনেক সময় ট্যাম্পুন ব্যবহারে যে বিরল ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ ঘটে থাকে, এক্ষেত্রে তেমনও হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া স্যানিটারি ন্যাপকিন কিংবা ট্যাম্পুনের প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ রক্ত জমা করতে পারে বলে বেশি পরিমাণে ঋতুস্রাবের দিনে এটি অনেক বেশি উপযোগী হতে পারে। তাই স্যানিটারি ন্যাপকিনের পরিবর্তে কাপ ব্যবহারে বেশি উৎসাহ দিতে প্রচার চালানো হয়েছে কেরলে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন