নতুন বছরে নয়া শঙ্কা। দিল্লির বায়ু দূষণের মাত্রাকেও ছাপিয়ে যেতে পারে কলকাতা! সম্প্রতি, এমনই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
মহামারী করোনা, দৈনন্দিন মূল্য বৃদ্ধির জেরে সাধারণ মানুষ যখন জেরবার, তখন নতুন করে পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কার পূর্বাভাস দিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটি গুরুতর হুমকি ধেয়ে আসছে। তাঁদের মতে, কলকাতা এবং অন্য কিছু জেলা শহরে দূষণের মাত্রা আরও খারাপ পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। এমনকি, রাজ্য রাজধানীতে গড় বায়ু মানের সূচক (AQI) নয়া দিল্লিকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
HEI Soga-এর একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে, জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লির পরে বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে দূষিত শহর হল কলকাতা। আর, এই সূচক করা হয়েছে বায়ুতে ২.৫ পিএম এবং নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের পরিমাণের পরিমাপে।
২.৫ পিএম বলতে বোঝায় সূক্ষ্ম কণা। যা শরীরের গভীরে প্রবেশ করে এবং ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের মধ্যে জ্বালার সৃষ্টি করে। যার ফলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল করে দেয়। তাছাড়া কার্ডিওভাস্কুলার এবং শ্বাসকার্যে সমস্যার সৃষ্টি করে।
২০২২ সালের শেষে ডিসেম্বর মাসে একটি ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, কলকাতায় বায়ু দূষণের মাত্রা জাতীয় রাজধানীর চেয়ে উপরে চলে গেছে। চলতি বছরের ১২ এবং ১৩ ডিসেম্বর, কলকাতায় বায়ু দূষণের মাত্রা ছিল ৩০০ AQI।
পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ৫০ এর মধ্যে থাকলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক নয়। ৫০ থেকে ১০০ মোটামুটি। ১০০ থেকে ২০০ AQI স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। ২০০ থেকে ৩০০ খারাপ। ৩০০ থেকে ৪০০ অত্যন্ত খারাপ। ৪০০ থেকে ৫০০ AQI শ্বাস নেওয়ার যোগ্য নয়।
কলকাতার বর্তমান বায়ুদূষণ প্রসঙ্গে- পরিবেশবিদ সোমেন্দ্র মোহন ঘোষ জানাচ্ছেন, এট একটি উদ্বেগজনক ইঙ্গিত। তিনি বলেন, 'মাঝে মাঝে জাতীয় রাজধানীতে AQI মাত্রায় ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আর, কলকাতার পরিস্থিতি বিপরীত দিকে যাচ্ছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থাগুলি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা না হলে, আগামী বছরে কলকাতার পাশাপাশি সমগ্র অঞ্চলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।'
জানা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে বায়ু দূষণের মাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে রাজ্যের বিভিন্ন কয়লা-ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (CREA) এর এক রিপোর্ট জানাচ্ছে, 'পশ্চিমবঙ্গের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং নিঃসরণ কমানোর জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে, তা তারা কার্যকর করেনি সেভাবে। যদিও পশ্চিমবঙ্গের ৪০ শতাংশ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এখনও পর্যন্ত ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন (FGD) প্ল্যান্টের জন্য বিড দেয়নি। বাকি ৬০ শতাংশ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দূষণ হ্রাস প্রযুক্তি ইনস্টলেশন সম্পূর্ণ করতে পারেনি। যে সময়সীমা গত সাত বছরের মধ্যে তিনবার বাড়ানো হয়েছে।
CREA বিশ্লেষক সুনীল দাহিয়া মনে করেন, দূষণের উৎস নিয়ন্ত্রণে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির যে ভূমিকা আছে, তা কার্যকর করতে পারেনি তারা। এটি একটি গুরুতর ত্রুটি। যার ফলে রাজ্যে দূষণের মাত্রা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন