ফের আতঙ্কের শিরোনামে উঠে এলো উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর জেলার নাম। লখিমপুর খেরি হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান সাক্ষী অভিযোগ করেছেন যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই জেলার গোলা এলাকায় বাড়ি ফেরার সময় দুই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি তার গাড়িতে গুলি চালায়। তাঁর প্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা।
আক্রান্ত ব্যক্তির নাম দিলবাগ সিং। যিনি ভারতীয় কিশান ইউনিয়ন (টিকাইত) লখিমপুর জেলার সভাপতি। যিনি গত ৩ অক্টোবর লখিমপুরে ৫টি গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। যেখানে মূল অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলে আশিষ মিশ্রের নাম।
ঠিক কী হয়েছিল? দিলবাগ সিং একটি ভারতীয় সংবাদসংস্থাকে জানান, "আমার দুই বন্ধু জিতেন্দ্র এবং ভিপিনকে বাদেহাদ গ্রামে নামানোর পর, আমি যখন বাড়ি ফিরছিলাম তখন রাত ৯.৩০ টা বাজে। পিছন থেকে একটি মোটরসাইকেলে দুজন লোক আসে। তারা আমার গাড়িতে গুলি চালায় এবং গাড়ির একটি টায়ার ফেটে যায়। এর ফলে আমার গাড়িটি থেমে যায়। তখন হামলাকারীরা গাড়ির সামনে এসে গেট খোলার চেষ্টা করে। গাড়ির দরজা খুলতে ব্যর্থ হলে তারা আবারও দুটি গুলি করে। এরপর তারা পালিয়ে যায়।"
দিলবাগ সিং-এর নিরাপত্তার জন্য যাকে নিয়োগ করা হয়েছিল সেই নিরাপত্তারক্ষী ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তাঁর প্রসঙ্গে সিং বলেন, "তিনি কিছু কাজে গিয়েছিলেন এবং ১৫ মিনিট পরে ফিরে আসেন।"
দিলবাগ সিং-এর অভিযোগের ভিত্তিতে, খুনের চেষ্টা করার জন্য পুলিশ ওই অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এ বিষয়ে লখিমপুর খেরির পুলিশ সুপার সঞ্জীব সুমন জানান, "আমরা এই মামলার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছি।" ইতিমধ্যেই পুলিশ তাদের তদন্তে বিভিন্নরকম প্রযুক্তিগত সহায়তা নিচ্ছে এবং এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। লখনউ থেকে একটি ফরেনসিক দলকে ঘটনাস্থল পরিদর্শণের জন্য ডাকা হয়েছে।
তদন্তকারী একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে তাঁরা সিং-এর দুই বন্ধু, জিতেন্দ্র এবং ভিপিনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন। যারা হামলার আগে বি কে ইউ নেতা দিলবাগের সাথে ছিলেন। অন্যদিকে দিলবাগ সিং-এর নিরাপত্তারক্ষীকে ইতিমধ্যেই বরখাস্ত করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছিল, নিহতের পরিবারের সদস্যসহ ৯১ জন সাক্ষীকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক সদস্যকে একজন করে নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়েছিল যাদের জবানবন্দী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে রেকর্ড করা হয়েছিল।
এর আগে, মৃত কৃষকদের পরিবার আশিষ মিশ্রের জামিন বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। তাদের দাবি ছিল, আশীষ জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ১০ মার্চ এই মামলার আরও একজন সাক্ষী হরদীপ সিং- এর ওপর হামলা চালিয়েছিল।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর লখিমপুর খেরিতে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত কৃষকদের ওপর SUV চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে মন্ত্রীপুত্র আশিষ মিশ্রের বিরুদ্ধে। যার ফলে চারজন কৃষকসহ একজন সাংবাদিক নিহত হন। এছাড়াও আহত হন অসংখ্য মানুষ।
বিরোধীদের মতে, বিজেপি নেতার ছেলে প্রথম থেকেই এই ঘটনার সাথে যুক্ত থাকায় উত্তরপ্রদেশের পুলিশ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে উদ্যোগ নিয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন