লাক্ষাদ্বীপের মুখ্য প্রশাসক প্রফুল্ল প্যাটেলের বরখাস্তের দাবি জানালেন সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে লাক্ষাদ্বীপে স্বৈরতান্ত্রিক অধিনিয়ম প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তিনি। এই সিদ্ধান্তের জেরে লাক্ষাদ্বীপের বিজেপিও দুই ভাগ হয়ে গিয়েছে। লাক্ষাদ্বীপের বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ কাসিম প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে এই সিদ্ধান্তের আপত্তি জানিয়েছেন। আজ বিজেপি বিরোধী দলগুলি লাক্ষাদ্বীপ প্রশাসকের অসাংবিধানিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতিকে ডেপুটেশন দেবে।
এই প্রসঙ্গে এক ট্যুইট বার্তায় সীতারাম ইয়েচুরি জানান, কেন্দ্র নিয়োজিত লাক্ষাদ্বীপ প্রশাসকের সিদ্ধান্ত যে ভাবে আমাদের সংবিধানকে অমান্য করছে, প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার অমান্য করেছে, তাতে অবিলম্বে প্রশাসনকে বরখাস্ত করতে হবে। তিনি যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা বাতিল করতে হবে।
অভিযোগ, প্যাটেল এখন লাক্ষাদ্বীপ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অধিনিয়মের নতুন খসড়ায় জমির মালিকানা ব্যবহারে আইন বদলে দিচ্ছেন। উন্নয়নের নামে যে কোন জমি এখন সরকার নিয়ে নিতে পারবে। মদ নিষিদ্ধ ছিল। এখন তিনটি দ্বীপের হোটেল, রিসর্টে মদের অনুমতি দিতে চাইছে। এক্ষেত্রে তাঁর উদ্দেশ্য, পর্যটন ব্যবসা বৃদ্ধি করা। উপকূল আঞ্চলিক এলাকা এবং উপকূল রক্ষী আইনের অজুহাতে মৎস্যজীবীদের কুটির থেকে উচ্ছেদ করতে চাইছে। জমির মালিকানা বদল এই চেষ্টায় ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, লাক্ষাদ্বীপের ৯৪.৮ শতাংশ আদিবাসী। রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার সুবিধা করে দিতে আইন বদলের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রস্তাবিত আইনে বলা হচ্ছে, দুটির বেশি সন্তান থাকলে পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হবে না। এছাড়াও প্রশাসকের নির্দেশে দ্বীপবাসির খাদ্যাভ্যাসের বদল ঘটবে বলেও দাবি করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে সিএএ এনআরসি বিরোধী আন্দোলনকারীদের দেশদ্রোহী বলে দেগে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেন প্যাটেল। এমনকী তাঁর আমলে করোনার সংক্রমণও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। কেরল কোচি থেকে আসা পর্যটকদের কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে, এই নিয়ম তুলে দেন তিনি। ফলে এক বছর ধরে প্রায় করোনামুক্ত থাকা লাক্ষাদ্বীপের ৭০০০ জন সংক্রমিত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই মাস ধরে লকডাউন চলায় রুটি-রুজিতে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
কেরলের সঙ্গে লাক্ষাদ্বীপের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির সাযুজ্য থাকায় প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন প্রশাসকের স্বৈরাচারী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন।
রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে কড়া ভাষায় বলেছেন, অবিলম্বে এসব বাতিল করা হোক। লাক্ষাদ্বীপের প্রশাসক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বা জনগণের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করেই এসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। বাস্তুতন্ত্র এবং পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন