গত ১৩ ডিসেম্বর সংসদের নতুন ভবনে শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন আচমকাই লোকসভার দর্শকাসন থেকে দুই যুবক অধিবেশন কক্ষে ঝাঁপ দেন এবং ক্যানিস্টার থেকে হলুদ ধোঁয়া স্প্রে করতে শুরু করেন। ওই ঘটনায় আটক চারজনকে বৃহস্পতিবার সাত দিনের জেল হেফাজত দেওয়া হয়।
এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড ললিত ঝা বুধবার থেকে পলাতক ছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার রাতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রমাণ লোপাটের জন্য বাকি চারজনের মোবাইল ফোন পুড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ললিত। তবে কেন তিনি এই কাজ করেছেন বা আদৌ তিনি সত্যি বলছেন কিনা তার তদন্ত শুরু করেছে দিল্লি পুলিশ। আপাতত দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলে রয়েছেন তিনি।
গত ১৩ ডিসেম্বর দুপুর ১ টার সময় মনোরঞ্জন ডি এবং তাঁর সহযোগী সাগর শর্মা দর্শকদের গ্যালারি থেকে লোকসভার কক্ষে ঝাঁপ দেন। সেই সময় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বক্তৃতা দিতে শুরু করেছিলেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সাগর ডেস্কের উপর লাফিয়ে লাফিয়ে স্পিকারের চেয়ারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এবং মনোরঞ্জন একটি ক্যানিস্টার থেকে হলুদ ধোঁয়া স্প্রে করছেন।
আচমকা এই ঘটনায় হুলুস্থুল পড়ে যায় সংসদ কক্ষে। রীতিমত অবাক হয়ে যান সাংসদরা। কারণ কোনও সাধারণ মানুষকে মূল অধিবেশন কক্ষে পৌঁছাতে গেলে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় অতিক্রম করতে হয় এবং অবশ্যই কোনও সাংসদের স্বাক্ষর করা পাস থাকতে হয় দর্শনার্থীদের কাছে।
অমল শিন্ডে এবং নীলম দেবী নামে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলাকেও সংসদের বাইরে রঙিন ধোঁয়ার ক্যানিস্টারসহ আটক করে পুলিশ। তাঁরা বাইরে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এই চারজনকে জেরা করে আরও দুজনের কথা জানতে পারে পুলিশ। এদেরই একজন ললিত ঝা। যাকে এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ধরা হচ্ছে।
সূত্র অনুসারে, সোশ্যাল মিডিয়া মারফত পরিচয় হয়েছে এই ছ’জনের। বুধবার রাতে হরিয়ানার গুরুগ্রাম থেকে পঞ্চম অভিযুক্ত বিশাল শর্মাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ বা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে।
যদিও হঠাৎ কেন ললিত ঝা আত্মসমর্পণ করেছেন, সেই প্রশ্ন নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। ঘটনার দিন সমস্ত ঘটনাটি ভিডিও রেকর্ড করে প্রথমে সেটি ইনস্টাগ্রামে আপলোড করেন ললিত। পরে কলকাতার এক এনজিওতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যাতে সমস্ত ঘটনাটি দেশের সব সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হতে পারে।
ঘটনার দিনই দিল্লি ছাড়েন ললিত। রাজস্থানের নাগৌরে পৌঁছে দুই বন্ধুর সাথে দেখা করেন ললিত। তাঁদের কাছেই আশ্রয় নেয় তিনি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ললিত দাবি করেছেন রাজস্থানেই প্রমাণ লোপাটের জন্য বাকি চারজনের মোবাইল ফোন পুড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। যদিও ললিতের এই দাবি আদৌ সঠিক তারই তদন্ত শুরু করেছে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল।
অন্যদিকে, ললিতের সঙ্গে বৃহস্পতিবার দিল্লি আসেন মহেশ নামক একজন। তারএই ঘটনাই শামিল হওয়ার কথা ছিল। তাঁকেও গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।
সংসদ ভবনে বুধবারে ঘটনার পুননির্মাণ করতে চায় দিল্লি পুলিশ। তবে শীতকালীন অধিবেশনের জন্য আগামী শনিবার অথবা রবিবার সেই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। কীভাবে ওই চারজন যুবক একাধিক নিরাপত্তা বলয়কে ফাঁকি দিয়ে লোকসভা কক্ষে ঢুকল, তা দেখতেই এই পুননির্মাণের সিদ্ধান্ত দিল্লি পুলিশের। আপাতত ললিত সহ বাকি চারজন দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের অধীনে রয়েছেন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন